কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত জনজীবন: কৃষি জমি হারানোর শঙ্কা

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলা নদনদী দ্বারা সমৃদ্ধ। এই জেলার মধ্যে দিয়ে ৪৪টি ছোট-বড় নদী প্রবাহিত হলেও ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, ধরলা এবং তিস্তা নদী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিবছর এই নদীগুলোর ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জেলার বেশিরভাগ মানুষ।
জেলার উত্তর প্রান্তের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই, চর ভুরুঙ্গামারী, বঙ্গ সোনাহাট, পাইকেরছড়া, বলদিয়া এবং আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন গঙ্গাধর ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে চরম বিপর্যস্ত। সাম্প্রতিক বন্যার পর এই নদীগুলোর তীব্র স্রোতে বহু ঘরবাড়ি, কৃষিজমি এবং স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ, বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ি, কালিগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গাধর এবং দুধকুমার নদীর ভাঙন স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে হতাশা এবং দুশ্চিন্তা বয়ে এনেছে। একই অবস্থা ফুলবাড়ি উপজেলার। ধরলা নদীর ভাঙনে ফুলবাড়ি সদর ও বড়ভিটা ইউনিয়নের অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ এবং নাজিমখাঁ ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিবছর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করছে। উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ হাতিয়া, সাহেবের আলগা এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ভাঙনের প্রধান কারণ। চিলমারী ও রাজীবপুরেও এই নদীর ভাঙন থামছে না।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তারা প্রতিবছর নদী ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘প্রতিবছর বিভিন্ন উপজেলায় বাঁধ নির্মাণ, জিও ব্যাগ এবং ব্লক ফেলার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে টেকসই সমাধান সম্ভব হচ্ছে না।’
নদী ভাঙনের পেছনে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বর্ষাকালে নদীর তীব্র স্রোত, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নরম মাটির গঠন এবং পাহাড়ি ঢল প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে প্রধান বিবেচ্য। তবে এ অঞ্চলে নদী ভাঙনের পেছনে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- অবৈধ বালু উত্তোলন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত বাঁধ এবং সেতু নির্মাণের মত মানবসৃষ্ট কারণ।
নদী ভাঙন রোধে কয়েকটি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
- নিয়মিত নদী খনন ও তীর রক্ষা প্রকল্প
- নদীর তীরে গাছ লাগানো এবং সঠিক বনায়ন
- স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা
- ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ
স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
-জাহিদ খান, কুড়িগ্রাম
ON/MDK