বিধবা রাজিয়া বেগমের জীবনযুদ্ধ: মানবেতর বসবাস এক ভাঙা ঘরে

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালি গ্রামে ষাটোর্ধ্ব বিধবা রাজিয়া বেগম জীবনযুদ্ধে একা লড়াই করছেন। জরাজীর্ণ ভাঙা ঘরে একাকী বসবাস করা এই নারী দীর্ঘ এক দশক ধরে পাননি কোনো সরকারি সহায়তা। স্বামী-সন্তানহীন এই নারীর জীবনে নেই কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস বা নিরাপদ আশ্রয়।
এক ভাঙা ঘরে দিনাতিপাত
দূর থেকে দেখলে রাজিয়া বেগমের ঘরটি একটি পরিত্যক্ত ঝুপড়ির মতো মনে হয়। কয়েকটি বাঁশের ওপর টিন ও পলিথিনের সামান্য আশ্রয়ে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্ষা এলেই ঘর থেকে পানি চুইয়ে পড়ে, শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হয়, আর গরমকালে অভাবের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ঘরের মেঝেতে পলিথিন বিছিয়ে কোনোভাবে রাত কাটান তিনি। থাকার মতো কোনো খাট বা প্রয়োজনীয় আসবাব নেই।
রাজিয়া বেগম বলেন, ‘দশ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমার কোনো সন্তান নেই। একাই রয়েছি স্বামীর ভিটায়। সরকারি কোনো সুবিধা পাই না। প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেন, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেন, আবার বৃষ্টির সময় আশ্রয় দেন। এভাবেই টিকে আছি।’
বিধবা ভাতা বা সরকারি সাহায্য পাননি
রাজিয়া বেগম বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা পাননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘বিধবা ভাতার জন্য অনেকবার ইউপি সদস্যের কাছে গিয়েছি, কিন্তু শুধু আশ্বাস দিয়েছেন, কোনো সহায়তা মেলেনি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘রাজিয়া বেগম বিধবা ভাতার জন্য আমার কাছে কখনো আসেননি। তাছাড়া সরকার গত চার বছর ধরে নতুন বিধবা ভাতা চালু করেনি। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাকে ১০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।’
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজিয়া বেগমকে তার ঘর মেরামতের জন্য টিন দেওয়া হবে। এছাড়া, ভবিষ্যতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।’
স্থানীয়দের সহায়তা ও মানবিক উদ্যোগের আহ্বান
রাজিয়া বেগমের মানবেতর জীবন দেখে স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেশী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্ষা এলেই তার ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমার ঘরে এসে থাকতে হয় তাকে। আমরা এলাকাবাসী যতটুকু পারি, সাহায্য করি।’
সামাজিক সংগঠন পুটিয়াখালি ভলান্টিয়ার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত বলেন, ‘রাজিয়া বেগম এক নিঃসঙ্গ ও অসহায় নারী। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার আপন বলতে কেউ নেই। যদি সরকারি সহায়তায় একটি টিনের ঘরের ব্যবস্থা করা যায়, তবে অন্তত মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই হবে।’
সমাজের বিত্তবান ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ
রাজিয়া বেগমের দুর্দশা লাঘবে স্থানীয় প্রশাসন, মানবিক সংগঠন ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী। দ্রুত সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে তিনি অন্তত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারবেন এবং মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পাবেন।
–মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি
–ON/SMA