পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে জুনায়েদের দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী জুনায়েদ হোসেন এবারের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)সহ দেশের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে তিনি বিরল মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তার এই সাফল্যে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।
জুনায়েদ রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের মরজাল গ্রামের মো. মনির হোসেন ও মোসা. নাজমা বেগম দম্পতির মেজো সন্তান। তার বাবা মোবাইল ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় ভাই মেহেদী হাসান নাহিদ ভৈরব হাজী আসমত আলী কলেজে গণিত বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন এবং ছোট বোন সায়মা হোসাইন মুন মাছুমা হালিম দাওরায়ে হাদিস মহিলা মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (আলেমা) সম্পন্ন করেছেন।
জুনায়েদ বুয়েটের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-তে ৭৪তম, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এ ৯৬৬তম, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ ২৭তম এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)-এ ৪৮৫তম স্থান অর্জন করেছেন।
শিক্ষাজীবন
জুনায়েদের শিক্ষাজীবনের শুরু মরজাল মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পান। এরপর ২০২০ সালে মরজাল কাজী মো. বশির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান।
পরিবারের সংগ্রাম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পরিবারের সীমিত আয়ের মধ্যেও জুনায়েদের বাবা-মা তার পড়াশোনার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তবে উচ্চশিক্ষার ব্যয় নির্বাহ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। তার বাবা মনির হোসেন বলেন, ‘মধ্যবিত্ত সংসারে সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দেওয়া সত্যিই কঠিন। মোবাইলের দোকানের সামান্য আয়ে পরিবারের খরচ মেটানো অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবু চেষ্টা করছি যেন আমার সন্তানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়।’
ইংরেজি শিক্ষক অপু মোদক বলেন, ‘তার এই অসাধারণ সাফল্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
জুনায়েদের সাফল্যে এলাকাবাসী গর্বিত। স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন খান বলেন, ‘জুনায়েদ অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ছেলে। তার সাফল্যে আমরা সবাই আনন্দিত। তবে তার পড়াশোনার জন্য যদি সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে সে আরও বড় কিছু করতে পারবে।’
ভাই মেহেদী হাসান নাহিদ বলেন, ‘ছোট ভাই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পাঁচটিতে চান্স পেয়েছে। পরিবার খুবই আনন্দিত।’
জুনায়েদের বক্তব্য
জুনায়েদ হোসেন বলেন, ‘প্রথমে চুয়েটে ভর্তি হই, পরে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়ে গত দুই দিন আগে ভর্তি হই। আমার এই সাফল্যের পেছনে পরিবারের ত্যাগ ও শিক্ষকদের অবদান অসামান্য। আমি ভবিষ্যতে ভালো একজন প্রকৌশলী হয়ে অর্জন দিয়ে দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য কিছু করতে চাই।’
–হারুনূর রশিদ, রায়পুরা
–ON/SMA