শহীদ সেলিমের মৃত্যুর সাত মাস পর জন্ম নিল তার কন্যা ‘রোজা’, উপহার নিয়ে হাজির প্রশাসন

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার শহীদ সেলিম তালুকদারের পরিবারে এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের গুলিতে নিহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝালকাঠির একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এই কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয়েছে ‘রোজা’।
শহীদ সেলিম তালুকদার (২৮) তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মেজো ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন এবং ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তার বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের সহকারী মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মৃত্যুর এক বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমান চুন্নুর মেয়ে সুমী আক্তারকে বিয়ে করেন সেলিম। তার মৃত্যুর চার দিন পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, সুমী অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু সেলিম জানতেই পারেননি যে, তিনি বাবা হতে চলেছেন।
বিয়ের এক বছরের মাথায়, আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল নলছিটির মানুষ। সাত মাস পর তার কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার পর সেই শোকের মাঝে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে পরিবারের জন্য। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ‘রোজা’, যা তার পিতার ডাকনাম ‘রমজান’-এর সঙ্গে মিল রয়েছে।
নবজাতককে দেখতে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান, পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পৌর প্রশাসক কাওসার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন ও নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম হাসপাতালে যান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নবজাতকের পরিবারের জন্য বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও, জেলা প্রশাসন নবজাতকের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহনের ঘোষণা দেয় এবং সিভিল সার্জন নবজাতকের চিকিৎসা মনিটরিং করবেন বলে জানান।
শহীদ সেলিমের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতো। ও জেনে যেতে পারেনি বাবা হবে। এখন ওর স্মৃতি হিসেবে ওর সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করব। সবাই আমার ছেলের কন্যা ও তার স্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন।’
জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, ‘আমরা তার ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেলিমের কন্যাসন্তানকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
–মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি
–ON/SMA