রায়পুরার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি: তদন্ত বিলম্বে জনমনে ক্ষোভ

নরসিংদীর রায়পুরা পৌরসভায় সাবেক মেয়র জামাল আহমেদ মোল্লার বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এবং সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ দিয়েছেন এবং বিপুল অঙ্কের ঘুষ লেনদেন করেছেন। অভিযোগের তিন মাস পার হলেও তদন্ত কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় পৌরবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মামুনুর রহমান এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। নরসিংদীর স্থানীয় সরকার উপপরিচালককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখনো কার্যকর তদন্ত শুরু হয়নি। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে পৌরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর পৌর মেয়র জামাল আহমেদ মোল্লা স্বাক্ষরিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৮টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, নিয়মের তোয়াক্কা না করে এবং তথ্য গোপন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সহকারী কর নির্ধারক, সহকারী কর আদায়কারী, ট্রাক চালক, অফিস সহায়কসহ বিভিন্ন পদে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে সহকারী কর নির্ধারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মেয়রের শালী ভাজনন্দন আজাদ মৃধা, সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগ পেয়েছেন তার মামাতো ভাই মো. কামর উদ্দিন। এছাড়া, মেয়রের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মোমেন মিয়াকে ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার মাধ্যমে ট্রাক চালক হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। অফিস সহায়ক পদে বয়স সংশোধন করে আনিছুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি নেওয়া আহমদ আলীর প্রতিবন্ধী কার্ডও নিয়োগের ঠিক আগমাসে তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের তালিকা ঠিক করা হয়েছিল। প্রতিটি পদের জন্য ১০-১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সহকারী কর নির্ধারক পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেছিলাম, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে জানতে পারি, আগেই নিয়োগপ্রাপ্তদের ঠিক করা হয়েছে। আমাকে স্পষ্ট বলা হয়, মেয়রের আত্মীয় একজন প্রতিযোগী রয়েছেন, তাই আমার সুযোগ নেই।’
অন্যদিকে, পৌরসভায় কর্মচারীদের পিএফ/জিপিএফ তহবিলের অর্থও চার-পাঁচ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ সাবেক মেয়র জামাল মোল্লার ব্যক্তিগত খাবারের বিল ১ লাখ টাকা পৌরসভার তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মৌসুমী সরকার রাখী জানান, ‘কর্মজটের কারণে তদন্ত শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।’
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘তদন্তের বিষয়ে অবগত আছি, তবে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে সাবেক পৌর মেয়র জামাল আহমেদ মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় জনগণ দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
–রায়পুরা (নরসিংদী)
–ON/SMA