কচুয়ার অনিমা রানীর ২০ বছরের সংগ্রাম: বাঁশের হস্তশিল্পই জীবিকার ভরসা

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার দোয়াটি গ্রামের অনিমা রানী সরকার গত ২০ বছর ধরে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্বামী কর্মহীন থাকায় সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে। তবে প্লাস্টিকের সহজলভ্যতার কারণে বাঁশের সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় মাসে মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা আয় হচ্ছে, যা দিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পেলে ব্যবসা প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
অনিমা রানীর স্বামী পরীক্ষিত সরকার কর্মহীন থাকায় সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাকে। চার মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে পিপাসার বিয়ে দিলেও বাকি তিন মেয়ে পূজা (অষ্টম শ্রেণি), মেঘলা (প্রথম শ্রেণি) ও রাত্রি (শিশু শ্রেণি) এখনো পড়াশোনা করছে। সীমিত আয়ের কারণে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
প্রতিদিনের মতো নিজের বাড়ির উঠোনে বসে তিনি হাঁস-মুরগির খাঁচা, ডুলা, মাছ ধরার চাঁই, চালুন, কুলা ও ধান রাখার ডোলসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন। এক কুড়ি খাঁচা বিক্রি করেন ২ হাজার টাকায়, এক কুড়ি ডুলা ১ হাজার টাকায়, চালুনি ১ হাজার ৫০০ টাকায় ও এক কুড়ি কুলা বিক্রি করেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এসব সামগ্রী তৈরি করতে তার মেয়ে পূজা তাকে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে এই কাজ করছি। স্বামী কর্মহীন হওয়ায় পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে আমাকে। প্লাস্টিকের জিনিস বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় বাঁশের হস্তশিল্পের চাহিদা কমে গেছে। এখন যা আয় করি, তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালাই।’ তিনি সরকারি সহায়তা পেলে ব্যবসা বাড়িয়ে আয় বৃদ্ধি করতে পারবেন বলে আশা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপ্ন রানী, সন্ধ্যা রানী ও পুলিন গোস্বামী জানান, অনিমা রানী কঠোর পরিশ্রম করে হাতে তৈরি জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে তার জন্য এটি যথেষ্ট নয়। সরকারি সহায়তা পেলে তার ব্যবসা আরও প্রসারিত হতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা (আপা) রুবাইয়ারা খাতুন রুবি বলেন, ‘তিনি আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি তার পণ্যগুলো আমাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাজারজাত করা হবে, এতে বিক্রি বাড়বে এবং তিনি স্বাবলম্বী হতে পারবেন।’
–মো: মাসুদ মিয়া, কচুয়া
–ON/SMA