‘সোনার বাংলা’ গড়তে গিয়ে ‘শ্মশান বাংলা’ তৈরি করা হয়েছে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘অতীতে সোনার বাংলা কায়েম করতে গিয়ে শ্মশান বাংলা কায়েম করা হয়েছে।’ শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত এক বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর লক্ষ্মীপুরে জামায়াতের এ ধরনের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি বলেছি, ২৫ তারিখের মধ্যে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে আমি স্বেচ্ছায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হবো। যতদিন আজহার ভাই কারাগারে থাকবেন, ততদিন আমিও কারাগারে থাকবো। আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার পরই আমি কারাগার থেকে বের হবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যে দলের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়েছে, সেটি হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একে একে দলটির শীর্ষ ১০ জন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কারাগারে রয়েছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে ছয় মাস হয়ে গেল, একে একে জাতীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মুক্তি পাচ্ছেন, কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে। ১৩ বছর কারাগারে থেকে তিনি অনেক কিছু হারিয়েছেন। অনেক হয়েছে, এখনই তাকে মুক্তি দিন। না হলে জামায়াত ইসলামীকে সমর্থন করা বাংলাদেশের তিন কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে জেলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
জামায়াত আমীর বলেন, ‘মানুষ আশা করেছিল ২০২৪ সালের পর সব দুঃশাসন, দুর্নীতি ও অন্যায় থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু আমরা কি মুক্ত হতে পেরেছি? আমাদের যুবকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, যুবকরা কখনো অন্যায় মেনে নেয় না, তারা সংগ্রাম করে— হয় শহীদ হয়, না হয় বিজয়ী হয়ে ফিরে আসে। এই আন্দোলনে শত শত যুবক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষ জীবন দিয়েছে, ৩৪ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। কিন্তু এখনো অন্যায়, অবিচার ও জুলুম রয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি জাহেলি সমাজ পরিবর্তন হয়ে সোনালী সমাজে রূপান্তরিত হয়েছিল। আমরা যদি সেই আদর্শ গ্রহণ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশও সোনালী সমাজে পরিণত হবে। অতীতে সোনার বাংলা গড়তে গিয়ে বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করা হয়েছে। সোনার বাংলা গড়তে হলে কোরআনের শাসন প্রয়োজন। বাংলার জমিনে ইতোমধ্যে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন হবে কোরআনের বাংলাদেশ।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমীর এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান, ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ফোরামের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আজীম প্রমুখ।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা ফারুক হোসাইন নুরনবীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন লক্ষ্মীপুর জেলা নায়েবে আমীর এডভোকেট নজির আহম্মদ, এ আর হাফিজ উল্লাহ, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট হাসিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মহসিন কবীর মুরাদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মমিন উল্যাহ পাটওয়ারী, শহর জামায়াতের আমীর এডভোকেট আবুল ফারাহ নিশান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরমান হোসাইন এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের শহর সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন।
–আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, লক্ষ্মীপুর
–ON/SMA