কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে রাখাইন ভাষা, নেই ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র

বরগুনার উপকূলীয় রাখাইন পাড়াগুলোতে নেই কোনো ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র, ফলে হারিয়ে যাওয়ার পথে রাখাইন ভাষা। মাতৃভাষা টিকিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ।
একসময় রাখাইন কিয়াংগুলোতে ভাষা চর্চার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে রাখাইন শিশুদের অনেকেই নিজ মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও তারা বর্ণমালা চিনতে বা লিখতে জানে না। কারণ, স্কুলগুলোতে বাংলা ও ইংরেজির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু রাখাইন ভাষা শেখানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।
একজন রাখাইন শিশু বলেন, ‘আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি, কিন্তু অক্ষর লিখতে বা বুঝতে পারি না। রাখাইন ভাষা আমাদের ঐতিহ্য। ভাষার মাসে আমরা চাই, আমাদের ভাষাকে সংরক্ষণ করা হোক।’
অন্য এক রাখাইন শিশু জানান, ‘আমাদের স্কুলে মূলত বাংলা আর ইংরেজি শেখানো হয়, রাখাইন ভাষার সুযোগ নেই।’
স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা বলছেন, মাতৃভাষা টিকিয়ে রাখতে স্কুলগুলোতে রাখাইন ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করা জরুরি। একজন রাখাইন ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় মাতৃভাষা শেখার সুযোগ ছিল, কিন্তু এখন নেই। সরকার উদ্যোগ না নিলে আমাদের ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর রাখাইন ভাষার শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষার চর্চা করতে পারবে।’
রাখাইন সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘তালতলীতে রাখাইন কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলে এই সেন্টার গড়ে তুলে রাখাইন ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা হবে।’
নিজ মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও লিখতে বা বর্ণমালা চিনতে পারছে না বরগুনার রাখাইন শিশুরা। তাই তাদের ভাষা রক্ষায় দ্রুত সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
–সানাউল্লাহ রেজা শাদ, বরগুনা
–ON/SMA