যমুনা রেলসেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু

উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে যমুনা রেলসেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে যমুনা রেলসেতু দিয়ে পারাপার হয়। যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত এই নতুন রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।’ ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে দুটি লাইন থাকলেও শুরুতে একটি লাইন দিয়েই উভয় দিকে ট্রেন চলবে। ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন ব্যবহার করা হবে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে দুই লাইনে ট্রেন চলবে বলে জানান তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগাযোগ উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
রেলসেতু প্রকল্প সূত্র জানায়, ৯,৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের আগস্টে যমুনা নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা পরে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৬,৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২,১৪৯ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্ট ভেঞ্চার।
প্রসঙ্গত, যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা বহুমুখী সেতু ১৯৯৮ সালে চালু হয়, যা ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করে। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেওয়া হয়, ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এই সমস্যার সমাধানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু যমুনা রেলসেতু।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পুরনো সেতু পারাপার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে নতুন রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাক বিশিষ্ট এই রেলসেতুর জন্য ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেলসেতু’ রাখা হয়।
–সাজেদুল ইসলাম, ভূঞাপুর
ON/SMA