মহাকাশে প্রথম চীনা নারী!
প্রথমবার বেসামরিক কোনো নারীকে মহাকাশে পাঠিয়েছে চীন! চীন গত ৩১শে অক্টোবর তার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে সফলভাবে তিনজন মহাকাশচারী প্রেরণ করেছে। যার মধ্যে এবার প্রথম কোনো বেসামরিক নারী হিসেবে ওয়াং হাওজে-কে এই মিশনে পাঠানো হয়েছে। যা চীনের মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে নারীর সাবলীল অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হলো বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তার আগেও অবশ্য আরো দুইজন সম্মানিত চীনা নারী মহাকাশে গিয়েছিলেন।
নতুন এই মহাকাশচারীর দলটি শেনঝো-১৯ স্পেসক্রাফট এ করে পৃথিবী থেকে ছয় ঘণ্টারও বেশি ভ্রমণের পর তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে নিরাপদে পৌঁছে যায়। তাছাড়া গত ৩০শে অক্টোবর বুধবার বেইজিং এর স্থানীয় সময় সকাল ৪টা ২৭ মিনিটে শেনঝো-১৯ স্পেসক্রাফটে তাদের উৎক্ষেপণ করা হয়। চীনের প্রথম কোন বেসামরিক নারী হিসেবে ওয়াং হাওজে আগামী ছয় মাস মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে থাকা অবস্থায় তিনি সহকর্মীদের সাথে স্পেস ওয়ার্ক এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তিনি পেশায় একজন নিউক্লিয়ার রকেট সায়েন্টিস্ট এবং অ্যাস্ট্রোন্যান্ট। তিনি ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তিনি চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি অ্যাস্ট্রোনট কর্পসে অ্যারোস্পেস ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের পদে কর্মরত রয়েছেন।
চীন মহাকাশ গবেষণায় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদের বুকে স্থায়ীভাবে নিজস্ব বেস স্টেশন তৈরি করতে চায়। যা বাস্তবায়নে দেশটির একাধিক টেক জায়ান্ট সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই চীনের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সাথে একত্রে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এদিকে দেশটি ইতোমধ্যেই মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি তিয়ানগং স্পেস স্টেশন ডিজাইন ও তৈরি করতে প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। বর্তমানে আমেরিকাসহ মোট ১৫দেশ একত্রে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে৷ তবে সারা বিশ্বের মধ্যে একক কোন দেশ হিসেবে একমাত্র রেড জায়ান্ট চীনের রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি স্পেস স্টেশন। এর বর্তমান ওজন হচ্ছে এক লক্ষ কেজি বা ১০০ টন। এই স্পেস স্টেশনের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে। চীনের এই নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস স্টেশনটি তিনটি মডিউল দ্বারা গঠিত। যার মধ্যে থিয়ানহ্য কোর, ওয়েন্থিয়ান এবং মেংথিয়ান ল্যাব মডিউল সিস্টেম। এর মধ্যে থিয়ানহ্য কোর মডিউলটি ২০২১ সালের ২৯শে এপ্রিল এবং ওয়েন্থিয়াং মডিউলটি ২০২২ সালের ২৪শে জুলাই পৃথিবীর লো আর্থ অর্বিটে স্থাপন করা হয়।
তাছাড়া গত ২০২২ সালের ৩১শে অক্টোবর সর্বশেষ মেংথিয়ান ল্যাব মডিউলটি চালু হওয়ার পর থেকে মহাকাশ স্টেশনটি পুরোপুরিভাবে তার কার্যক্রম শুরু করে। তবে মহাকাশে পাঠানো মানব জাতির প্রথম কোন স্পেস স্টেশন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিল পাঠানো ‘স্যালিয়ুত-১’ স্পেস স্টেশন/মডিউল। এর ওজন ছিল প্রায় ১৮ হাজার ৪২৫ কেজি এবং এটিকে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২২০ কিলোমিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলক এই স্পেস মডিউলটি মহাকাশে ১৯৭১ সালে ১১ই অক্টোবর পর্যন্ত ১৭৫ দিন অবস্থান করে। আসলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়নে এক আমেরিকার পর হয়ত সারা বিশ্বের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বিনিয়োগ করছে। বিশেষ করে বর্তমানে চীন মহাকাশ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণায় আমেরিকার সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সূত্র: সিসিটিএন, ইউকিপিডিয়া, বিবিসি, গ্লোবাল টাইমস।
লেখক: সেরাজুর রহমান, নাটোর
ON/RBL