আদালতে রিমান্ড শুনানিতে বিমর্ষ আনিসুল হক, হাসিখুশি দীপু মনি
আসামির কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। নিজের আইনজীবী ছাড়া আর কারও সঙ্গে তিনি কথা বলেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে একজনকে গুলি করে হত্যার মামলায় তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এ সময় তাঁকে বেশ বিমর্ষ দেখা যায়।
কাঠগড়ায় আনিসুল হকের ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজি সেলিমকেও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। মাঝেমধ্যে তিনি তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। হাজি সেলিমের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর ছেলে সোলাইমান সেলিম। প্রায় এক ঘণ্টা দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেননি।
আলাদা দুটি হত্যা মামলায় যখন সোলাইমান সেলিমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়, তখন হাজি সেলিম বারবার তার বাঁ হাত মাথার ওপরে রাখছিলেন।
হাজি সেলিমের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। লালবাগের একটি হত্যা মামলায় তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তিনি নিজেই আদালতের সঙ্গে কথা বলেন। দাবি করেন, যে এলাকায় খুনের ঘটনা, তিনি সেই এলাকার সংসদ সদস্য নন। তিনি ভীষণ অসুস্থ।
কাঠগড়ার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
এর আগে আজ বুধবার সকাল আটটার পর প্রিজন ভ্যানে আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, কামরুল ইসলাম, আ স ম ফিরোজ, সাদেক খান, জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী প্রমুখ আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দলের নেতা, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সকাল ৯টার পর তাঁদের পুলিশি পাহারায় আদালতকক্ষে তোলা হয়। এরপর ঘণ্টাবাপী শুনানি শেষে আবার তাঁদের প্রিজন ভ্যানে কারাগারে নেওয়া হয়।
আনিসুল হক কারও সঙ্গে কথা বলেননি
শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন আনিসুল হক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কেবল ঢাকায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে ৫৫টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। আজ তিনি কাঠগড়ায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট ইউসুফ সরদার নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার এজাহারে আনিসুল হকের নাম রয়েছে। এ মামলায় তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। তখন আনিসুল হকের আইনজীবী এই রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন। আনিসুল হক তখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আনিসুল হকের রিমান্ড শুনানির সময় ঠিক তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কামরুল ইসলাম। তাঁকে লালবাগ থানায় দায়ের করা খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। কামরুলের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তাঁর মক্কেল নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর বয়স ৭৩ বছর।
এ সময় কামরুল নিজেই আদালতকে বলেন, তিনি খুবই অসুস্থ। যে এলাকায় এ খুনের ঘটনা ঘটেছে, তিনি সেই এলাকার সংসদ সদস্যও নন। এই খুনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
এ সময় কামরুল ইসলামের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, আদালতে কেবলই শুনি, তাঁরা নানা রোগে আক্রান্ত। কিডনি নেই, লিভার নেই, আরও অনেক কিছুই নেই। কিন্তু আন্দোলনের সময় তাঁরা সবাই সুস্থ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে কামরুল ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কামরুলের ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজি সেলিম। তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছেলে সোলাইমান সেলিম।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, চকবাজারে রাকিব হাওলাদার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সোলাইমান সেলিম। তখন তাঁর আইনজীবী প্রাণনাথ রায় আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেল বিদেশে লেখাপড়া করেছেন। তাঁর বাবা হাজি সেলিম কথা বলতে পারেন না। এরপর বিদেশ থেকে এসে বাবার আসনে তিনি নির্বাচন করেন। এই হত্যা মামলা হওয়ার আগে তাঁর নামে কোনো থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও নেই।
আইনজীবী প্রাণনাথ রায় আদালতে আরও বলেন, বাবার আসনে নির্বাচন করাটাই সোলাইমানের জন্য কাল হয়েছে। তিনি কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। শুনানি শেষে আদালত এ মামলায় সোলাইমানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া লালবাগ থানায় দায়ের করা খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় সোলাইমানের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর বাইরে যাত্রাবাড়ী থানায় করা সাইদুর রহমান হত্যা মামলায় সাবেক চিপ হুইপ আ স ম ফিরোজের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
হাসিমুখে দীপু মনি
কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনিকে আদালতে আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। আরও কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সঙ্গে। কথা বলার সময় তাঁর মুখে ছিল হাসি।
এজলাসে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও নিজেদের আইনজীবী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কথা বলেননি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুও কারও সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে। আমুর আইনজীবী আদালতকে বলেন, ৯০ বছর বয়সী আমির হোসেন অনেক রোগে আক্রান্ত। তিনি কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
এ ছাড়া সালমান এফ রহমান, দীপু মনি, ইনু, মেনন, পলক, সাদেক খান, এ বি এম ফজলে করিম, হাজি সেলিম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, মনিরুল ইসলাম ও আবুল হাসানকে যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি থানায় দায়ের করা বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সুত্র: প্রথম আলো
ON/RMN