প্রধানমন্ত্রীও আগের প্রধানমন্ত্রীর মতো হবেন না, এটা নিশ্চিত করতে চাই: তারেক রহমান
আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না—এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি স্তরে নিশ্চিত করা হবে যে, কেউ জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, আমরা দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে চাই।’
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের বিএনপির রূপরেখার ৩১ দফা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তারেক রহমান এই প্রতিশ্রুতির কথা জানান। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের লোক শোর হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। লন্ডন থেকে সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। সেমিনারে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে একজন আলোচক স্মরণ করিয়ে দেন, সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারলে জনগণের কাছে বরখেলাপকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের কারণে, কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে কাউকে হেনস্তা করা হবে না। সত্য গোপন করতে মেইন স্ট্রিম (মূল ধারা) ও সোশ্যাল মিডিয়া (সামাজিক মাধ্যম) যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটির প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না।’
তবে এ ক্ষেত্রে দেশ গঠনে গণমাধ্যমের কাছে বিএনপি নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান আরও বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে কেবল একটি দল থেকে অন্য দলের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর নয়। বরং, ক্ষমতার পালাবদলে এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হওয়া উচিত, যেখানে সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়। ফ্যাসিবাদের পতনের পর গত তিন মাসে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ এমন অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যাতে রাজনীতিতে আধুনিকায়নের উন্মেষ ঘটে। সেই সব উদ্যোগকে তারুণ্যের উদ্দীপনায় দেশজুড়ে প্রতিপালন করেছে বিএনপির তৃণমূল।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সীমাহীন খুন, হামলা, ধর্ষণ, ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও দলীয়ভাবে তাদের শাস্তি দেওয়ার ইতিহাস নেই। দেড় হাজারেরও অধিক গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা করার পরেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কোনো অনুশোচনা নেই।’ তিনি বলেন, বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে। তারপরেও বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অপরাধে জড়িত হলে, তা জানামাত্রই দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে আলোচিত প্রায় সব সংস্কার প্রস্তাবই বিএনপির ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয়, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’
সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। তিনি সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মানুষের জীবন—সবকিছুর কিন্তু পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনটা অনেক বেশি। বাংলাদেশের রাজনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজনৈতিক কাঠামোর কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেবেন না, যেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ বিএনপি যে এখন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে, সেটা একেবারেই যৌক্তিক এবং সঠিক বলে মনে করেন মান্না।
রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা প্রস্তাবের জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান, জামায়াতের ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বিএনপির ওপর ভরসা রাখি। ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন না করলে আমরা জনগণের কাছে বরখেলাপকারী হিসেবে চিহ্নিত হব।’
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, এখন বাংলাদেশের বড় সমস্যা হচ্ছে, বিগত ১৬ বছরে যারা দেশ শাসন করছে তারা বাংলাদেশের তাবৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে গেছে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নেওয়া সংস্কারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, দেশের ঐক্য ও সংহিত বিনষ্ট করে এমন কোনো সংস্কার হতে পারে না।