নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চান শিক্ষার্থীরা, বিবেচনার আশ্বাস কমিশন প্রধানের
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ব্যালটে ভোট গ্রহণসহ নানা প্রস্তাব নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে তুলে ধরেছেন রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার, আওয়ামী লীগকে ভোট করতে না দেওয়া, পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর রামপুরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সভায় শিক্ষার্থীরা ওই সব প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের ছোট ভাই বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ নির্বাচন কমিশন নিয়োগে স্বচ্ছতা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
বুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী মো. শামসুজ্জামান নির্দলীয় পর্যবেক্ষক ও প্রার্থীদের প্রকৃত নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণের প্রস্তাব করে বলেন, মাদক কারবারি ও গণহত্যাকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আম্মার বিন আসাদ বলেন, ‘গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে সুনাগরিক তৈরি করতে হবে।’
ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তালহা বিন আমীন সভায় প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া কতখানি যৌক্তিক হবে?’ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না বলে মত দেন তিনি।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হৃদয় জামান সজল নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধ এবং না ভোটের বিধান রাখার প্রস্তাব করেন।ড্যাফোডিলের আসিফ হাসান বলেন, আর কোনো ডামি নির্বাচন যেন না হয়। তিনি জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন।
নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাবিহা তাহের বলেন, সরকারি দলের অধীনে কোনো নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। তিনি ইভিএমের ব্যবহার বাদ দিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করেন। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনোয়ারা ইতু বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবমুক্ত রাখা, ভোটারদের নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি এবং কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেন। মামুনুল হকের ছেলে মাদ্রাসাশিক্ষার্থী জিমামুল হক বলেন, ‘আদর্শিক জোট হওয়া উচিত, নির্বাচনী জোট নয়।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহমেদ সালমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ বা অনাস্থার ব্যবস্থা রাখা উচিত।’ এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা একই ব্যক্তির দল ও সরকারপ্রধান হিসেবে না থাকা, দুবারের বেশি এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা, দলনিরপেক্ষ স্পিকার, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, তরুণদের সুযোগ দিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বয়স ও জামানত কমানোর প্রস্তাব করেন শিক্ষার্থীরা।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘এই প্রথম রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছে এবং জানতে চাচ্ছে শিক্ষার্থীরা কী চায়। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। কোনো শক্তি যেন আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে না পারে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব গভীরভাবে বিবেচনা করা হবে। তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না। আমি আমার সহকর্মীদের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করছি।’
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত, নারী নিপীড়ক দ্বারা শাসিত হচ্ছিলাম। আমরা সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছি। আমাদের একটা সৎ, সজ্জন, গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় উত্তরণ হতে হবে। সংস্কার এবং নির্বাচন দুটোরই প্রয়োজন আছে।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা
ON/ORNB