তিস্তা চুক্তি নিশ্চিত করতে ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ দেবে সরকার

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা সড়ক সেতু সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত ‘তিস্তা নিয়ে করণীয়’ শীর্ষক গণশুনানিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তিস্তা নদীর ন্যায্য পানিবণ্টন নিশ্চিত করতে ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের ঘোষণা দেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিক পানি আইনের ভিত্তিতে ভারতকে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, ‘গত সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে শুধু ছবি তুলেছে, কিন্তু তিস্তার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা শক্ত অবস্থান নিয়ে আলোচনা চালাব।’
তিনি আরও জানান, তিস্তার চরাঞ্চলে ফসল নষ্ট রোধে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন এবং কাউনিয়া থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া, শিক্ষার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চরাঞ্চলে আধুনিক লাইব্রেরি স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের জন্য বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন এবং নদীভাঙন রোধে টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে সমালোচনা করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে তিস্তার খসড়া চুক্তি নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও তারা ভারতের কাছে কোনো সুবিধা আদায় করতে পারেনি।’
পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ‘ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে, যাতে স্থানীয়দের মতামত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি আটকিয়ে তিস্তাকে মরুভূমিতে পরিণত করে। আমরা প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আখতার হোসেন বলেন, ‘প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে।’
এদিকে, পুলিশ-প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স তিস্তা অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে তদন্ত ত্বরান্বিত করবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া, আগামী মাসেই পীরগাছা-চিলমারী সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে।
তিস্তা ইস্যুতে সরকারের দৃঢ় অবস্থান ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হলেও, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার স্থায়ী সমাধান কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তবে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষার উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন।