রাশিয়ার সমস্যা জটিল করছে দুর্বল রুবল

রাশিয়ার অন্যতম বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা এসেছে, যা রুবলের দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাথাব্যথা রয়েছে। তবে ব্যাংক অব রাশিয়াকে আরও বড় সমস্যা নিয়েও এখন ভাবতে হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রতি ডলার ১১৫ রুবলে বিক্রি হয়েছে, যা দুই বছরের মধ্যে রুশ মুদ্রার সবচেয়ে দুর্বল অবস্থাকে নির্দেশ করছে। তবে এরপর রুবল তার হারানো শক্তি কিছুটা ফেরত পেয়েছে। এটি ঘটেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ও ইউরো কেনা বন্ধ করার পর। কিন্তু রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন আক্রমণ করার পর রুবলের দাম আগে এতটা কখনোই কমেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা কয়েক মাস ধরেই অর্থনীতির খারাপ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করছেন। তিনি সুদের হার ২১ শতাংশে উঠিয়েছেন। কিন্তু মূল্যস্ফীতি, যা এখন প্রায় ৯ শতাংশ, তা কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে জিডিপির প্রায় ৮ শতাংশ খরচ ও ২ শতাংশের বাজেট ঘাটতি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে চলেছে।
এখন রুবল দুর্বল হয়ে পড়ায় আমদানি করা পণ্যের দাম আরও বাড়বে, ফলে খারাপ হবে পরিস্থিতি।
রাশিয়ার সামরিকায়ন হয়েছে। ফলে সম্পদ চলে যাচ্ছে প্রতিরক্ষা খাতে। পাশাপাশি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে শ্রমিকসংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমবাজারে কর্মক্ষম জনশক্তির মাত্র ২ শতাংশ বেকার। ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার অনেক মেধাবী দেশ ছেড়েছেন। একই সঙ্গে মস্কোর পরিকল্পনা রয়েছে ১৫ লাখ মানুষকে যুদ্ধের জন্য মোতায়েন করা হবে। ফলে কাজ করার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার অসামরিক অর্থনীতির অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা আর নেই। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
সুদের হার ব্যবসায়ীদের জন্য রীতিমতো শাস্তিমূলক পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও তাঁরা আরও ঋণ চাইছেন। রাশিয়ার করপোরেশনগুলো অবশ্য এই ঋণ চায় পরিবর্তনশীল সুদহারে, কারণ তাদের আশা সুদের হার শিগগিরই কমে যাবে। এর আগে যখনই মুদ্রা নিয়ে রাশিয়া সমস্যায় পড়েছে, তখনই সুদের হার কমানো হয়েছিল।
চলতি বছরে বেসরকারি খাতের ঋণ গ্রহণ বাৎসরিক ভিত্তিতে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালেও ঋণের প্রবৃদ্ধি একই ছিল। সে সময় সুদের হার অনেক কম ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন যে এখন সময় পাল্টেছে। তিনি অঙ্গীকার করেছেন, মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত তিনি সুদের হার উঁচুতেই রাখবেন। কিন্তু কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ, এটা তিনি নিজে ঠিক করতে পারেন না। এটি ঠিক করতে পারেন ভ্লাদিমির পুতিন একা।
গত ২৭ নভেম্বর ব্যাংক অব রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা ‘স্থানীয় (বৈদেশিক বিনিময়) বাজার থেকে আর বৈদেশিক মুদ্রা কিনবে না।’ এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আর্থিক বাজারের উত্থান-পতন কমানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুত্র: প্রথম আলো
ON/RMN