রোগীর মামলা, তার জীবন ‘চুরি’ করে উপন্যাস লিখেছেন আলজেরীয় লেখক, জিতেছেন পুরস্কারও
ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সাহিত্য পুরস্কারজয়ী লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে আলজেরিয়ায়। অভিযোগ, ওই লেখক তার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্ত্রীর এক রোগীর জীবনকাহিনি চুরি করে গল্প লিখেছেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকেই ‘হুরিস’ (Houris) উপন্যাসের জন্য গোঁকু পুরস্কার জিতেছেন কামেল দাউদ। বইটি আলজেরিয়ার ১৯৯০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের বিবরণ। ওই গৃহযুদ্ধে প্রায় ২ লাখ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল।
কিন্তু গৃহযুদ্ধের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারী আলজেরিয়ান টেলিভিশনে হাজির হয়ে অভিযোগ করেছেন, বইটির নায়িকা ফজর-এর গল্প বোনা হয়েছে তার ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে।
সাদা অভিযোগ করেন, তিন বছর আগে দাউদ তাকে দেখা করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওই সাক্ষাতে দাউদ তার জীবনের ওপর ভিত্তি করে বই লিখতে চাইলেও তিনি অনুমতি দেননি।
ইসলামি উগ্রপন্থি জঙ্গিরা সাদা আরবেন নামক ওই নারীর পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা করে, তার গলাও কেটে ফেলে। এখন তিনি স্পিকিং টিউবের মাধ্যমে কথা বলেন। উপন্যাসে ফজরের জীবনও একই ঘটনা ঘটেছে।
সাদা আরবেন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে দাউদের ভবিষ্যৎ স্ত্রী আইচা দাহদৌ-এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি একাধিক সাইকায়াট্রিক সেশন করেছেন। এই দম্পতি তার অনুমতি ছাড়াই তার জীবন কাহিনি ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন সাদা।
সাদা বলেন, বইয়ের নায়িকার জীবনের অনেক বিবরণ—’তার স্পিকিং টিউব, তার ক্ষতচিহ্ন, তার ট্যাটু, তার হেয়ারড্রেসার’—সরাসরি আমি দাহদৌকে যা বলেছি, তা থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ফজরের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক এবং তার গর্ভপাতের ইচ্ছা—এসবও তার জীবন থেকে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সাদা
সাদা অভিযোগ করেন, তিন বছর আগে দাউদ তাকে দেখা করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওই সাক্ষাতে দাউদ তার জীবনের ওপর ভিত্তি করে বই লিখতে চাইলেও তিনি অনুমতি দেননি।
‘এটা আমার জীবন, এটা আমার অতীত। আমাকে এভাবে ব্যবহার করার কোনো অধিকার তার ছিল না,’ আলজেরিয়া ওয়ান টিভিতে বলেন তিনি।
দাউদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আলজেরিয়ায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এক মামলায় চিকিৎসা গোপনীয়তার নিয়ম লঙ্ঘন আনা হয়েছে। অপর মামলায় গৃহযুদ্ধের পর প্রণীত একটি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই আইন অনুসারে, কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ‘জাতীয় ট্র্যাজেডির ক্ষত’ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
এই আইনের আওতায় গৃহযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা বা লেখা প্রকাশের অধিকার ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়েছে। আর এ কারণেই দাউদের বইটি আলজেরিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তার ফরাসি প্রকাশক গ্যালিমার্ডকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে আলজিয়ার্স বইমেলায়।
২০২০ সালে প্যারিসে পাড়ি জমান দাউদ বর্তমানে তিনি ফরাসি নাগরিক। আলজেরিয়ায় তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। সেদেশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন।
গোঁকু পুরস্কারজয়ী প্রথম আলজেরীয় লেখক দাউদ। তার আগের উপন্যাস ‘দ্য মরসল্ট ইনভেস্টিগেশন’ ২০১৫ সালে সেরা প্রথম উপন্যাসের পুরস্কার জেতে।
বিবিসি দাউদের মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলেও তিনি এখনও পর্যন্ত মামলায় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
তবে প্রকাশল আঁতোয়ান গ্যালিমার্দ বলেছেন, দাউদকে ‘আলজেরীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু মিডিয়া আক্রমণাত্মক মিথ্যাচারের প্রচারণার লক্ষ্য বানিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হুরিস অবশ্যই আলজেরিয়ার ট্র্যাজেডির দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু এর প্লট, চরিত্র ও নায়িকা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।’
দাউদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাগুলো আগস্টে দায়ের করা হলেও আলজেরিয়ায় প্রকাশ্যে জানাজানি হয়েছে বুধবার।
আলজেরীয় আইনজীবী ফাতিমা বেনব্রাহামের বলেন, মামলাগুলো আগে প্রকাশ্যে আনতে চাননি, কারণ তারা চাইছিলেন না যে মামলার কারণে গোঁকু পুরস্কারের জন্য বইটির মনোনয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ পশ্চিম সাহারার বিতর্কিত অঞ্চলকে মরোক্কান সার্বভৌমত্বের পক্ষে স্বীকৃতি দেওয়ার পর আলজেরিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে যখন উত্তেজনা বেড়েছে, সেই সময়ে সময়ে এই বিতর্ক উঠল।
আলজেরিয়া পলিসারিও স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘদিনের সমর্থক।
মাখোঁর এই পদক্ষেপে অনেক আলজেরিয়ান ক্ষুব্ধ। তারা দাউদের পুরস্কারকে সাহিত্যিক সম্মানের চেয়ে রাজনৈতিক পদক্ষেপ মনে করছেন।
সুত্র: tbs
ON/RMN