তুরস্কের ক্যারিয়ার বেসড বায়রাক্তার টিবি-৩ কমব্যাট ড্রোনের নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে!
তুরস্কের ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ‘বায়কার’ জানায় যে, গত ১৯শে নভেম্বর মঙ্গলবার তাদের তৈরি নতুন প্রজন্মের ক্যারিয়ার বেসড বায়রাক্তার টিবি-৩ কমব্যাট ড্রোন তুর্কি নৌবাহিনীর (ফ্ল্যাগশিপ) টিসিজি আনাদুলু লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে সফলভাবে প্রথম বার শর্ট টেক অফ আ্যন্ড ল্যান্ডিং সম্পন্ন করে। মূলত নিজস্ব প্রযুক্তির ডেডিকেটেড ইঞ্জিন ব্যবহার করে এবার এই অটোনোমাস কমব্যাট (ইউসিএভি) ড্রোনের সফল পরীক্ষা চালানো হলো। যা চূড়ান্তভাবে সার্ভিসে আসতে পারে আগামী ২০২৫ সালের শুরুর দিকে।
মূলত তুর্কি ‘বায়কার’ কোম্পানি পূর্বের বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের উপর ভিত্তি করে আরো আধুনিক প্রযুক্তি এবং অটোনোমাস শর্ট টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং করার উপযোগী ক্যারিয়ার বেসড টিবি-৩ কমব্যাট (ইউসিএভি) ড্রোন ডিজাইন ও তৈরি করেছে। নতুন সিরিজের এই কমব্যাট ড্রোনটি আকাশের অধিক উচ্চতায় ও দীর্ঘ সময় ব্যাপী উড্ডয়ন করতে সক্ষম। ক্যারিয়ারে বেশি সংখ্যক এরিয়াল সিস্টেম রাখা কিংবা সুবিধার স্বার্থে ল্যান্ডিং এর পর এর ডানা/উইংস ভাঁজ করে রাখা যায়। তাছাড়া এই ড্রোনের প্রথম সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করা হয় গত ২০২৩ সালের ২৭শে অক্টোবর। ক্যারিয়ার বেসড এই সিরিজের ড্রোনে ব্যবহার করা হয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (TUSAŞ Engine Industries Inc.) কোম্পানির তৈরি টিইআই পিডি-১৭০ লাইট ইঞ্জিন। যা কিনা ১৭০ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন করে এবং এটি আকাশে উড্ডয়নরত অবস্থায় (৭০% শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে) প্রতি ঘণ্টায় ১২.৮ লিটার ডিজেল জ্বালানি ব্যবহার করে।
আকাশে শক্তি উৎপাদনের জন্য এই ইঞ্জিনে জেট-এ১ কিংবা ডিজেল (ইএন-৫৯০) টাইপ ফুয়েল ব্যবহার করে। আসলে তুর্কি বাইকার কোম্পানি চলতি ২০২৪ সালের ২রা মে, তাদের তৈরি এই কমব্যাট ড্রোনটিকে আকাশের ৩৩ হাজার ফিট উচ্চতায় সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে। তাছাড়া গত ২০২৩ সালের ২০শে ডিসেম্বর এটি আকাশে ৫,৭০০ কিলোমিটার এরিয়া জুড়ে একটানা ৩২ ঘণ্টা উড্ডয়ন করে এক বিরল রেকর্ড সৃষ্টি করে। এটি গত ২৬শে মার্চ উচ্চ প্রযুক্তির (ASELFLIR-500) ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল রিকর্নিসেন্স, সার্ভেল্যান্স ও টার্গেটিং পড/সিস্টেম ইনস্টল করে পরীক্ষামূলক নজরদারি মিশন পরিচালনা করে। নতুন প্রজন্মের বায়রাক্তার টিবি-৩ কমব্যাট (ইউসিএভি) ড্রোনের দৈর্ঘ্য ৮.৩৫ মিটার, উচ্চতা ২.৬ মিটার এবং ইউং স্প্যান ১৪ মিটার। এর ম্যাক্সিমাম টেক অফ ওয়েট ১,৪৫০ কেজি এবং ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ২৮০ কেজি। এর অপারেশনাল রেঞ্জ ১ হাজার নটিক্যাল মাইল বা ১,৯০০ কিলোমিটার। এর ম্যাক্সিমাম স্পিড প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার এবং ক্রুইজ স্পিড প্রতি ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার। গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে এই ড্রোনের ৬টি হার্ড পয়েন্টে মোট ২৮০ কেজি পর্যন্ত মিসাইল, লেজার গাইডেড এন্ড আন-গাইডেড স্মার্ট মিউনিশন বহন করে।
মিসাইলের মধ্যে রকেটসানের তৈরি ৭০ এমএম মিসাইলের পাশাপাশি এমএএম-সি/ এমএএম-এল এবং এমএএম-সি প্রিসিয়েন্স গাইডেড মিউনিশন সিস্টেম বহন করতে পারে। তাছাড়া লেজার গাইডেড রকেট এবং এয়ার টু সারফেস লঞ্চড ৮১ এমএম মর্টার মিউনিশন বহন করতে পারে এটি। এভিয়েশন সিস্টেম হিসেবে এই কমব্যাট ড্রোনে উচ্চ প্রযুক্তির মাল্টি-মোড (এইএসএ) রাডার, ইন্টারচ্যেঞ্জেবল ইও/ আইআর/ এলডি ইমেজিং এন্ড টার্গেটিং সেন্সর/পড সিস্তেম ব্যবহার করা হয়েছে।
তাছাড়া এটিতে ইনস্টল করা হয়েছে তুরস্কের এসেলসান কোম্পানির তৈরি (ASELFLIR-500) ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল রিকর্নিসেন্স, সার্ভেল্যান্স ও টার্গেটিং সিস্টেম/পড ইনস্টল করা হয়েছে। যা দ্বারা অধিক উচ্চতা থেকে নিখুঁতভাবে ভূমি কিংবা সাগরের বুকে লুকিয়ে থাকা শত্রু পক্ষের টার্গেট শনাক্ত এবং নজরদারি মিশনে ব্যবহার করা হয়। এই কমব্যাট (ইউসিএভি) ড্রোনটিকে একেবারে স্বল্প দৈর্ঘ্যের রানওয়ে থেকে টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং করার উপযোগী করে তৈরি করেছে ‘বায়কার’। বিশেষ করে তুরস্কের নৌবাহিনীর ২৭ হাজার ৪৩৬ টন ওজনের টিসিজি আনাদুলু একমাত্র (ফ্ল্যাগশিপ) ক্যারিয়ার জাহাজে অপারেট করার বিষয়টি মাথায় রেখে এটিকে তৈরি করা হয়। এটি এখনো পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে সার্ভিসে না আসলেও আগামী ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তুরস্কের নৌবাহিনীর হাতে হয়ত প্রথম ব্যাচে স্বল্প কিছু সংখ্যক ইউনিট তুলে দেওয়া হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি সাবাহ, দ্য ডিফেন্স
পোস্ট, উইকিপিডিয়া।
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman),
শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।