৩৫ সেন্টে কেনা হয়েছিল এক বাংলাদেশির দোকান থেকে; সেই ‘কলা শিল্প’ নিলামে বিক্রি ৬.২ মিলিয়নে
বছরের পর বছর ধরে শিল্পজগতে তুমুল বিতর্ক তুলে দেওয়া একটি কলা বুধবার সদেবিজ-এর সমকালীন শিল্প নিলামে ৬.২ মিলিয়ন ডলারে—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকা—বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে এই কলাটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফলে পরিণত হলো—যদিও কয়েকদিনের মধ্যেই ফলটি ফেলে দেওয়া হতে পারে। কলাটি কেনা হয়েছিল এক বাংলাদেশির দোকান থেকে।
এই কলা শিল্পকর্মটির ২০১৯ সালের কনসেপ্ট আর্টওয়ার্ক, নাম ‘কমেডিয়ান’। এই শিল্পের স্রষ্টা প্রখ্যাত ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলান। শিল্পকর্মটি ডাক্ট টেপ দিয়ে দেয়ালে আটকে রাখা হবে।
নিলামে বিজয়ীকে শিল্পকর্মের মালিকানার প্রামাণিকতার সনদ এবং কলা পচে গেলে তা বদলে দেওয়ার (যদি বদলাতে চান) নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।
মাত্র পাঁচ মিনিটের নিলাম শেষে ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে চীনা বংশোদ্ভূত ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা জাস্টিন সান শিল্পকর্মটি কিনে নেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পকর্মের বাজারে মন্দা থাকলেও ধনীরা যে চমকপ্রদ জিনিসের পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করবেন, তার ইঙ্গিত এই নিলাম।
এদিকে নিলামে জয়ী সান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি নিজে কলাটি খেয়ে এই অনন্য শিল্প অভিজ্ঞতার অংশ হতে চাই।’ তিনি হংকংয়ে বসে ভার্চুয়ালি এই নিলামে অংশ নিয়েছেন। ২০১৯ সালে আর্ট বাসেল মিয়ামি বিচ প্রদর্শনীতে ‘কমেডিয়ান’-এর প্রথম প্রদর্শনী হয়। পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসেন ক্যাটেলান ও এই শিল্পকর্ম।
মূল শিল্পকর্মটি মিয়ামির একটি দোকান থেকে কেনা কলা দিয়ে তৈরি হয়েছিল। তবে শিল্পীর নির্দেশনা অনুযায়ী এটি প্রতিস্থাপনযোগ্য। শিল্পপ্রেমীদের কাছে শিল্পের চিরাচরিত মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় ‘কমেডিয়ান’। এর পক্ষে-বিপক্ষে ওঠে আলোচনার ঝড়।
তবে পারফর্ম্যান্স আর্টিস্ট ডেভিড ডাটুনা শত শত দর্শকের সামনে দেয়াল থেকে কলাটি তুলে খেয়ে ফেলার পর ঘটনা নতুন মোড় নেয়। ডাটুনা পরে দাবি করেন, কলা খাওয়ার কাজটি তার নিজস্ব আর্টিস্টিক পারফর্ম্যান্স ছিল। কোনো ধরনের উগ্রতা প্রদর্শনের ইচ্ছায় তিনি কাজটি করেননি।
পরে জননিরাপত্তার কারণে মিয়ামির প্রদর্শনী থেকে ‘কমেডিয়ান’ সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে প্রদর্শনীতে ওই শিল্পকর্মের সবগুলো সংস্করণই বিক্রি হয়। দুটি সংস্করণ ১ লাখ ২০ হাজার ডলারে কিনে নেন ব্যক্তিগত সংগ্রাহকরা। তৃতীয় সংস্করণটি আরও বেশি দামে বিক্রি হয় (দাম জানানো হয়নি)। পরে সেটি নিউইয়র্কের গুগেনহাইম মিউজিয়ামে দান করা হয়।
পাঁচ বছর পর সদেবিজের নিলামে তোলা হয় ‘কমেডিয়ান’কে। ধারণা করা হয়েছিল, এর দাম উঠবে ১ মিলিয়ন থেকে ১.৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু চূড়ান্ত দাম—৫.২ মিলিয়ন ডলার, সঙ্গে নিলামঘরের ফি যোগ হয়ে ৬.২ মিলিয়ন ডলার—শিল্পকর্মটি সব অনুমানকে ছাড়িয়ে গিয়ে ৬.২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হলো।
‘কমেডিয়ান’-এর নিলাম সংবাদমাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। তবে এটি নিয়ে সমালোচনাও করেছেন অনেকে।
ফলের দোকান থেকে অভিজাত নিলামঘরে
বুধবার সদেবিজের নিলামে দেওয়ালে টেপ দিয়ে লাগানো ডোল কোম্পানির যে কলাটি বিক্রি হয়েছে, সেটি আগের দিন ম্যানহাটনের আপার ইস্ট সাইডের একটি ফলের দোকান থেকে ৩৫ সেন্টে কিনে আনা হয়েছিল।
ওই দোকানটি চালাচ্ছিলেন একজন বাংলাদেশি। তিনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি। তিনি জানতেনও না যে তার দোকানের একটি কলা কয়েক হাজার গুণ বেশি দামে বিক্রি হতে যাচ্ছে।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে কলাটি বিতর্কও তৈরি করেছিল। সদেবিজের অন্যতম নির্বাহী মাইকেল বুহানা এই ব্যঙ্গাত্মক শিল্পকর্মের নামে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে ছাড়েন। অনলাইন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, নিলাম-সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ তথ্য কাজে লাগিয়ে ওই টোকেনের দাম বাড়িয়ে আর্থিক লাভের চেষ্টা করছেন। বুহানা যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নিলাম শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছিল প্রায় ২১৪ মিলিয়ন ডলার। দামের অস্থিতিশীলতার কারণে ওই ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইনে ‘মিম কয়েন’ নামে পরিচিত।
নিলামে অংশ নেওয়া দুইজন ব্যক্তি বুহানার ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ২৫ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিলেন। এই শিল্পকর্মটি ইলন মাস্ককে উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।
নিলামে জয়ী জাস্টিন সান শিল্পকর্ম ও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। তার সংগ্রহে আলবার্তো জিয়াকমেত্তির ১৯৪৭ সালের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্যটি তিনি ২০২১ সালে ৭৮.৪ মিলিয়ন ডলারে কেনেন।
৬৪ বছর বয়সি শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলান প্রায়ই শিল্পকর্মের বাজারের সমালোচনা করেন। ২০১৬ সালে তিনি গুগেনহাইম মিউজিয়ামে সোনার তৈরি একটি টয়লেট স্থাপন করেছিলেন। আরেকবার একটি গ্যালারিতে নিজের ডিলারকেও টেপ দিয়ে দেওয়ালে আটকে দিয়েছিলেন।
এই শিল্পীর অভিযোগ, শিল্পকর্মের নিলামগুলোতে শিল্পীদের প্রতি অন্যায় করা হয়। কারণ সাধারণত শিল্পীরা প্রচারণা আর্থিকভাবে লাভবান হন না। এক সাক্ষাৎকারে ক্যাটেলান বলেন, ‘শিল্পকর্ম প্রথমবার বিক্রি হওয়ার পর শিল্পী আর উপকৃত হন না। নিলামঘর ও সংগ্রাহকরাই মুনাফা করেন। অথচ ব্বাজার চালানো জিনিসগুলোর স্রষ্টারা কিছুই পান না।’
সুত্র: tbs
ON/RMN