ব্ল্যাক ফ্রাইডে: সস্তায় কেনাকাটার উৎসবে প্রতারণার মহোৎসব
ব্ল্যাক ফ্রাইডের ধারণার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার দেশটিতে থ্যাংকস গিভিং ডে উদ্যাপিত হয়। এর পর দিনই ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এ দিনটিতে মূলত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যে ব্যাপক ছাড় দিয়ে থাকেন। এই দিন থেকেই বড়দিনের কেনাকাটা শুরু করেন অনেকে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই বেশ জনপ্রিয় এই দিনটি। এমনকি বাংলাদেশেও দিনটি ক্রমেই পরিচিতি পাচ্ছে। তবে এই দিবসকে ঘিরে প্রতারণার মাত্রাও বাড়ছে দিনকে দিন।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের (এনসিএসসি) প্রধান রিচার্ড হর্ন বলেন, ব্ল্যাক ফ্রাইডে এখন ‘ব্ল্যাক ফ্রড ডে’-তে পরিণত হচ্ছে। বছর শেষের বেচাবিক্রির ব্যস্ত এই সময়টা এখন প্রতারণার জন্য ‘প্রাইম টাইম’ হয়ে উঠেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ক্রেতাদের প্রলোভিত করছে অপরাধীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা পরামর্শ প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ বলছেন, তাঁরা খাদ্য ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবুও চলতি নভেম্বরে ব্ল্যাক ফ্লাইডের আয়োজনকে ঘিরে প্রত্যেক ক্রেতা ৩৬৫ পাউন্ড ব্যয় করবেন। গত বছর এ হার ছিল ৩০০ পাউন্ড।
গত বছরের ক্রিসমাসে যুক্তরাজ্যের মানুষ ১ কোটি ১৫ লাখ পাউন্ডেরও বেশি অর্থের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ পাউন্ড বেশি। পোশাক ও উচ্চ-মূল্যের প্রযুক্তি পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন এসব প্রতারণার অন্যতম সাধারণ মাধ্যম ছিল।
সাইবার নিরাপত্তা প্রধান রিচার্ড হর্ন বলেন, ক্রিসমাসের আগে কেনাকাটার এই উৎসবমুখর সময়টাকে সাইবার অপরাধীরা ‘প্রাইম টাইম’ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। এ সময়ে ক্রেতারা ছাড়ের সন্ধানে থাকেন। প্রতারকেরা এই সন্ধানকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার এই প্রতারণার জালকে আরও চৌকস করতে তুলছে। প্রতারকদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হওয়ার ১৬ হাজারেরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। প্রতিজন ভুক্তভোগী গড়ে ৬৯৫ পাউন্ড হারিয়েছেন।
এ ছাড়া, যুক্তরাজ্যের প্রতারণার অভিযোগ কেন্দ্র অ্যাকশন ফ্রডের কাছে আসা ৭ হাজার ১৬৮টি অভিযোগের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ছিল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কিত। এ ছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ অভিযোগও জমা পড়েছে।
এতে বোঝা যায়, ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও বড় দিনের মতো উৎসব কেন্দ্রিক বেচাবিক্রির আয়োজনগুলোতে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা বেশি ঘটছে এবং ক্রমেই বাড়ছে। অপরাধীরা প্রতারণার ক্ষেত্রে উন্নত কৌশল এবং প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় প্রতারণা গোয়েন্দা ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ৩০–৩৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি অনলাইন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁদের অনুপাত ২৩ শতাংশ। এরপর ৪০-৪৯ বছর বয়সী ২০ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের গড় বয়স ৪২ বছর।
অ্যাকশন ফ্রডের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যাডাম মেরসার বলেন, বিভিন্ন রকমের অফার দেখে হুজুগে অনলাইনে কিছু কিনবেন না। এ ধরনের অফার বা ছাড় এবং সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কৃত্রিম জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা প্রতারণার কৌশল।
তিনি আরও যোগ করেন, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, সোশ্যাল মিডিয়া বা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করার সময় ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, এটি অধিক নিরাপদ।
বিপুল অর্থের আদান–প্রদানকে সামনে রেখে প্রতারণাকারীরাও কৌশলে আনছে ভিন্নতা। তারা আরও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করছে। দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর থ্রি জানিয়েছে, এরই মধ্যে তাদের গ্রাহকদের কাছে প্রতারণাকারীদের বার্তা আসার পরিমাণ বেড়ে গেছে।
গত বছর ব্ল্যাক ফ্রাইডেকে ঘিরে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি স্ক্যাম রিপোর্ট পেয়েছিল থ্রি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে রিপোর্ট হওয়া স্ক্যাম মেসেজের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল ছাড় পাওয়ার জন্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্কতাও ব্যাপক মাত্রায় থাকতে হবে। প্রতারণাকারীরা বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন বা সময়সীমা নির্ধারণ করে বিশাল ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিপদে ফেলার চেষ্টা করতে পারে।
ব্ল্যাক ফ্রাইডে ইভেন্ট সামনে রেখে সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার জনসচেতনতা প্রচারণা চালাচ্ছে। অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় গ্রাহকদের টু–স্টেপ ভেরিফিকেশন সেটআপ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অপরিচিত কোনো লিংকে ক্লিক না করা এবং বিশ্বাসযোগ্য রিভিউ সাইটে বিক্রেতা বা কোম্পানির রিভিউ দেখে পণ্য অর্ডার করা করতে বলা হয়।
সুত্র: আজকের পত্রিকা
ON/RMN