মধ্যপ্রাচ্যের সংকট: কার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে?

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—কেন এতগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্র থাকার পরও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের জন্য কেউ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না? মিসর, তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, আরব আমিরাত, জর্ডান, বাহরাইন, মরক্কোসহ আরব লীগের সম্মিলিত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে দুর্বল বলে বিবেচিত হুতি বিদ্রোহী এবং হিজবুল্লাহ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের শিয়া ইসলামপন্থী সামরিক সংগঠন, যা ১৯৯০-এর দশকে উত্তর ইয়েমেনের সাদা শহরে জন্ম নিয়েছিল। সংগঠনটি প্রধানত যায়দি শিয়াদের নিয়ে গঠিত। অন্যদিকে, লেবাননের হিজবুল্লাহ একটি সুসংগঠিত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন, যা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অথচ সুন্নি মুসলমানদের জন্য তারাই লড়াই করছে, যখন আইএস-এর মতো চরমপন্থী সংগঠন একসময় শিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংস কার্যক্রম চালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিয়া-সুন্নি বিভেদের রাজনীতি মুসলিম বিশ্বকে বিভক্ত করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের কৌশলের অংশ হতে পারে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মুসলমানের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মূল কারণ ধর্মীয় বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকরণ।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন আরব বিশ্বের শাসকগোষ্ঠী এই সংকটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছে না? বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা। এই কারণে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকায় বৃহত্তর মুসলিম বিশ্ব একত্রিত হতে পারছে না।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্যের অভাবই পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিহাসবিদদের মতে, ইংরেজদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির ধারাবাহিকতায় আজও মুসলিম বিশ্ব বিভক্ত রয়েছে। অথচ ইসলামের মূল শিক্ষা হলো ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব। এই বাস্তবতায় মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে এবং শাসকদের এই ব্যর্থতার জন্য ভবিষ্যতে তাদের অবশ্যই জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।
–সূত্রঃ ইন্টারনেট
–ON/SMA