নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়
বাংলাদেশে শীত মৌসুমে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষত খেজুরের কাঁচা রসের মাধ্যমে। ২০০১ সালে মেহেরপুরে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার প্রায় ৭১ শতাংশ, যা একে অত্যন্ত প্রাণঘাতী করে তুলেছে।
বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ: কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ এবং প্রতিরোধে করণীয়
নিপাহ ভাইরাস (NiV) প্রথম শনাক্ত হয় মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে, যখন শুকরের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়ায়। বাংলাদেশে এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায়। এরপর ২০০৩ সালে ফরিদপুর এবং ২০০৫ সালে টাঙ্গাইলে এর আউটব্রেক দেখা যায়।
নিপাহ ভাইরাস কী এবং এটি কীভাবে ছড়ায়
নিপাহ ভাইরাস একটি প্যারামিক্সো ভাইরাস, যা প্রাকৃতিকভাবে বাদুড়ের দেহে থাকে। বাদুড়ের লালা ও প্রস্রাবের মাধ্যমে খেজুরের কাঁচা রস বা আধা খাওয়া ফল দূষিত হয়। এই দূষিত রস বা ফল খেলে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনাও পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরের গাছ জাল বা পলিথিন দিয়ে ঢাকলেও বাদুড়ের মাধ্যমে রস দূষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ কারণে কাঁচা রস খাওয়া একেবারে নিষেধ করা হয়েছে।
লক্ষণ ও সুপ্তিকাল
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের প্রদাহ দেখা দেয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে লালা ঝরা, এবং জ্ঞান হারানো। বাংলাদেশে কাশি ও হাঁচির লক্ষণ নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে, যা ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে সহজে ছড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।
এই ভাইরাসের সুপ্তিকাল সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন, তবে কখনো কখনো ২১ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
মৃত্যুঝুঁকি ও চিকিৎসা
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ৭১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই একমাত্র উপায়। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
খেজুরের রস ও গুড় নিরাপদ কি?
গবেষকরা জানান, ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিপাহ ভাইরাস ধ্বংস হয়। খেজুরের গুড় তৈরির সময় রস বেশি তাপমাত্রায় জ্বাল দেওয়া হয়, ফলে এটি নিরাপদ।
প্রতিরোধে করণীয়
১. খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া নিষিদ্ধ।
২. ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
৩. ফাটা বা আধা খাওয়া ফল না খাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
৪. হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকায় মাস্ক ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা উচিত।
৫. কোনো অসুস্থ ব্যক্তি খেজুরের কাঁচা রস খেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আইইডিসিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি বেশি এবং নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
-সাব্বির হোসেন, হাতীবান্ধা
ON/MDK