এগারোমাথায় এক কিলোমিটারে ৬টি ইটভাটা: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার জনবহুল এগারোমাথা বাজারের চারপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে ৬টি ইটভাটা চলছে কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই। এগুলোর কারণে ফসলি জমি, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইটভাটার কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য অবৈধ ট্রাক্টরের ব্যবহার এবং অদক্ষ চালকদের কারণে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের তদারকির অভাব পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন করে তুলছে।
টপ সয়েল ধ্বংস এবং কৃষি জমির ক্ষতি:
ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে উর্বর টপ সয়েল। এতে জমির উর্বরতা কমে গিয়ে ফসলি জমি বন্ধ্যা হয়ে পড়ছে। টপ সয়েলের অপসারণের ফলে জমির পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা ধীরে ধীরে মরুকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।
পরিবেশ দূষণের মারাত্মক প্রভাব:
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, ইটভাটাগুলোতে কয়লা ও কাঠ পুড়িয়ে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, যা স্থানীয় বায়ুদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। কালো ধোঁয়া বৃষ্টিপাতের ধারা ব্যাহত করে এবং স্থানীয় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইটভাটার কারণে আশপাশের জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে।
পানির স্তর হ্রাস:
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সুফী সিদ্দিকী বলেন, ‘এই এলাকায় আগে ৪৫-৫০ ফুট বোরিং করলেই পানীয় জল পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ১৭০-১৮০ ফুট বোরিং করেও উপযুক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই এলাকাটি পানির স্তরের সংকটে পড়বে।’
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে স্থানীয় বাসিন্দারা:
নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আ ন ম জাহিদুর রশিদ (পলাশ) বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়া ও বায়ুদূষণের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের হার বাড়ছে। ধূলিকণার কারণে চোখ ও ত্বকের রোগও বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত ইটভাটা স্থানীয় জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।’
-জাহিদ খান
ON/SMA