নরসিংদী চেম্বার নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: সাধারণ সদস্যদের ক্ষোভের সঞ্চার

আশির দশকের শুরুতে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সাবেক চেয়ারম্যান ও নরসিংদী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম আদম আলী মাষ্টারের নেতৃত্বে চেম্বার প্রতিষ্ঠা হয়। তার নেতৃত্বে ২৪ জন উদ্যোক্তা ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী নরসিংদী চেম্বারের গোড়াপত্তন করেন এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ শুরু হয়।
পরবর্তীতে আদম আলী মাষ্টারের মৃত্যুর পর এড. লিয়াকত হোসেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে, তিনি দীর্ঘ ৮ বছর সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় এফবিসিসিআইয়ের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। এর পরে রমিজ উদ্দিন ফকির নামে একজন দক্ষ সংগঠক চেম্বারের দায়িত্ব নেন এবং ৮ বছরের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করে চেম্বারকে পুনরুজ্জীবিত করেন।
আজকের নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এইভাবে গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে আঃ হালিম, মনজুর এলাহী, ফজলুল হক, মোশাররফ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আলী আহমেদ শিশির, মোমেন মোল্লা একে একে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিশেষভাবে মনজুর এলাহীর সময়কাল ছিল চেম্বারের স্বর্ণযুগ।
বর্তমানে, নরসিংদী চেম্বারের ঐতিহ্য হারানোর পথে। দূর্বল নেতৃত্বের কারণে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ হচ্ছেনা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২১ ডিসেম্বর চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নরসিংদী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এড. আব্দুল বাসেদ ভুইয়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তফসিল ঘোষণা করেন। এর পরই চেম্বারের চত্বরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে সাধারণ শ্রেণীর ২১ জন এবং সহযোগী শ্রেণীর ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
কিন্তু কিছু সময় পর, চেম্বারের উপদেষ্টা মন্ডলীর নামে একটি অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়। নরসিংদী চেম্বারের রুলস অব আর্টিকেলে এই ধরনের কমিটির কোন অস্তিত্ব নেই। অবৈধ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ শ্রেণীর ৯ জন এবং সহযোগী শ্রেণীর ৮ জন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে মেধা ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর হাজার হাজার টাকা ফি দিয়ে মেম্বারশিপ রিনিউ করি। মেম্বারের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। তিন বছর পর ভোট দেয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু রাজনৈতিক মহল আমাদের অধিকার হরণ করে, তাদের পকেটের মানুষদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছে।’
নরসিংদী চেম্বারের সাধারণ সদস্যদের ক্ষোভের অন্ত নেই। তারা বলছেন, চেম্বারের ইতিহাসে কখনোই এ ধরনের রাজনৈতিকভাবে কুক্ষিগত এবং অযোগ্য কমিটি গঠন করা হয়নি। এই পরিস্থিতি নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
-মাইনউদ্দিন সরকার, নরসিংদী
ON/RMN