মঠবাড়িয়ার পাঁচ বাঁধের ফাঁদে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের দোগনা ও ভূতা খালে পাঁচটি অবৈধ বাঁধের কারণে লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জোয়ার-ভাটার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা ও পানিসংকট। পাশাপাশি তিন ফসলি জমি অনাবাদী এবং মৎস্যচারণ ক্ষেত্র মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ায় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় দুর্বৃত্তরা খালে পাঁচটি বাঁধ নির্মাণ করে সেখানে মাছ চাষ ও অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর জোয়ারের সঙ্গে খালে আসা রেনুপোনা বাঁধের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারায় মৎস্যচারণ ক্ষেত্রগুলো শূন্য হয়ে গেছে। বাঁধের কারণে প্রতি বছর শত শত একর তিন ফসলি জমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা জানান, বাঁধ অপসারণের দাবিতে তারা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। বাদুরা গ্রামের চাঁন মিয়া হাওলাদারের পুত্র শাহ আলম বলেন, ‘বাঁধ অপসারণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু অদৃশ্য কারণে কোনো সমাধান পাইনি।’
বাদুরা গ্রামের বাঁধ অপসারণ আন্দোলনের নেতা মো. রোকনুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সব দপ্তরে ধর্না দিয়েছি। কিন্তু কোনো সুফল পাইনি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি।’
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারণে বাঁধ অপসারণের কাজ ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বাঁধগুলো অপসারণ করা হলে জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হবে এবং জলাবদ্ধতা ও পানিসংকট দূর হবে।
সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ১৪ বছর ধরে এই সমস্যা চলমান। বাঁধের কারণে মিরুখালী-সাফা সড়কটি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানির চাপ সামলাতে পারছে না এবং বারবার ভেঙে যাচ্ছে।
কৃষি ও মৎস্য সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতির পাশাপাশি শত শত মানুষ পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কৃষি থেকে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন, আবার কেউ শহরমুখী হচ্ছেন।
- মো. রোকনুজ্জামান শরীফ, মঠবাড়িয়া
ON/MDK