মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে উপকূলের বেড়িবাঁধ: ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত হাজার হাজার বসতঘর
বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার বসতঘর। বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উপকূলবাসী বারবার ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ব্লক দিয়ে নদীভাঙন রোধ করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বরগুনায় প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১০০ মিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনার ৩৮.৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৩১টি বসতঘর তলিয়ে গিয়েছিল।
মেরামতের কাজ করলেও দুর্বল নির্মাণ ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন দুর্যোগে বাঁধ বারবার ভেঙে যাচ্ছে। ফলে বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছরই জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
বরগুনা সদর উপজেলার বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি।
শাহিনুর নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের চেয়ারম্যান বেড়িবাঁধে দুইবার মাটি দিয়েছেন। কিন্তু বন্যার পানি সেই মাটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন আবার মাটি দিয়েই বাঁধ তৈরি করা হবে। আবার বন্যা হলে তা ভেঙে যাবে। জমি কিনে অন্য জায়গায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে।”
একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের বাঁধটা শুধু মাটি দিয়ে তৈরি, তাই জোয়ারের পানিতেই ভেঙে যায়। নদীর পাড়ের বাঁধ যদি উঁচু ও চওড়া করে নির্মাণ করা হয় এবং ব্লক ফেলা হয়, তাহলে টেকসই হবে।”
ডালভাঙ এলাকার বাসিন্দা আজাহার জানান, “আমরা গরিব মানুষ। স্বাভাবিক জোয়ারেই তলিয়ে যাই। ঘূর্ণিঝড় হলে বাঁচার আশা থাকে না। এবারের বন্যায় বাঁধ ভেঙে ঘরের সব কিছু ভেসে গেছে। আমাদের ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।”
ফুলঝুড়ি এলাকার ইমরান বলেন, “নদীর পাড়ে ব্লক ফেলে বাঁধ তৈরি করলে আমরা শুকনো জায়গায় থাকতে পারব। সরকারের কাছে শক্ত একটি বাঁধ ছাড়া কিছুই চাই না।”
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব বলেন,
“ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব দীর্ঘ সময় ধরে চলায় বেড়িবাঁধগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাটির বাঁধগুলো টেকসই নয়। ভবিষ্যতে বাঁধের স্লোপে ব্লক দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে ৮০০ কিলোমিটার বাঁধ একসঙ্গে ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা সম্ভব নয়।”
-সানাউল্লাহ রেজা শাদ ,বরগুনা সদর
ON/RBL