মাদারীপুরে ৬ মাস ধরে বন্ধ র্যাভিস ভ্যাকসিন, বাড়ছে জলাতঙ্ক রোগের শঙ্কা
মাদারীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৬ মাস ধরে বন্ধ র্যাভিস ভ্যাকসিন। বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আক্রান্তদের মধ্যে বাড়ছে জলাতঙ্ক রোগের শঙ্কা। কেউ কেউ ফার্মেসি থেকে উচ্চ মূল্যে ভ্যাকসিন কিনে সেবা নিচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের অজুহাতে দায় এড়ানোর চেষ্টা সিভিল সার্জনের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুকুরের কামড়ে আহত ২ বছরের মেয়েকে নিয়ে মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে এসেছেন সদর উপজেলার পূর্ব রাস্তির খালেদা বেগম। কয়েকঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জানতে পারেন হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন। এতে হতাশ তিনি। খালেদার মতো বহু মানুষ কুকুর বিড়ালসহ বন্যপ্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ছুটে আসছেন। জলাতঙ্কের রোগের একমাত্র প্রতিষেধকের সরবরাহ না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। একই চিত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ মাস ধরে র্যাভিস ভ্যাকসিন নেই জেলার কোন সরকারি হাসপাতালে। অথচ, প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ মানুষ সেবা নিতে আসেন এখানে। যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। জলাতঙ্ক রোগ থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিন নিতে এভাবেই হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। অথচ ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় বাইরে থেকে ৫৪০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় কিনে এনে সেবা নিচ্ছেন তারা। এতে খরচের সঙ্গে বেড়েছে ভোগান্তিও।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ফ্রিতে এই ভ্যাকসিন দেয়ার কথা রয়েছে। কুকুর, বিড়ালসহ বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আক্রান্ত মানুষদের সাত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিনের তিনটি ডোজ নিতে হয়।
খালেদা বেগম বলেন,
সরকারি হাসপাতালে ফ্রিতে সেবা নিতে আসছিলাম। ভ্যাকসিন না পাওয়ায় টাকা দিয়ে কিনে এনে সেবা নিতে হয়েছে। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দায়ী, তাদের উদাসীনতায় ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না।
ডাসার উপজেলার শশিকর থেকে আসা জগদীশ মল্লিক বলেন, আমার ছেলেকে কুকুরে কামড় দিয়েছে। দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে আসি, কিন্তু প্রতিষেধক নেই। পরে বাধ্য হয়ে ফার্মেসি থেকে কিনে এনে পুশ করতে হয়েছে। এমনটা হবে, জানলে এখানে আসতাম না।
সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের রূপরাইয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের মা বিলকিস বেগম বলেন, এটা সরকারি হাসপাতাল, অথচ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে আমার ছেলের জন্য সেবা নিতে হয়েছে। ভ্যাকসিন নেই কোন বিজ্ঞপ্তিও দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাহলে এমন ভোগান্তি হত না।
মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মিনারা আক্তার বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই, যাও আসে তাও অপ্রতুল। অল্প বরাদ্দ দিয়ে বেশি দিন চাপ সামলানো যায় না। চাহিদা মতো ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে রোগীদের ভোগান্তি কমবে। এজন্য সিনিয়র স্যারদের বার বার বলা হচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ও সিলিভ সার্জন ডা. মুনীর আহম্মেদ খান বলেন, জেলার জন্য চাহিদা থাকলে তার ৬ ভাগের এক ভাগ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। এজন্য দেখা দিয়েছে সংকট। এছাড়া রোগীর চাপও বেড়েছে। এমতাবস্থায় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। অল্প বরাদ্দ দিলে অল্পতেই শেষ হয়ে যায়, বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বলা হচ্ছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
সূত্র: সময়
ON/MRF