তিস্তা চুক্তির দাবিতে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আন্দোলন শুরু

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু করেছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় রংপুরের তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চরে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
আন্দোলনের মূল দাবি:
১. তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন: ভারতের সঙ্গে ২০১১ সালের খসড়া তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
২. দ্রুত নির্বাচন: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবি।
৩. ভারতের প্রতি আহ্বান: সীমান্তে গুলি বন্ধ করা, তিস্তার পানি বণ্টনের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশের প্রতি ‘বড় ভাই’সুলভ আচরণ পরিহার করা।
আন্দোলনের বিস্তৃতি ও কার্যক্রম:
লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে ১৩০ কিলোমিটারজুড়ে এ আন্দোলন চলছে। প্রধান সমাবেশস্থলগুলোর মধ্যে রয়েছে রংপুরের কাউনিয়া রেলসেতু ও গঙ্গাচড়া মহিপুর বাজার। কর্মসূচির আওতায় সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের রাত্রিযাপনের জন্য তাবু স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
রাজনৈতিক সংহতি ও বক্তব্য:
বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৮ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। আন্দোলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘লড়াই ছাড়া অধিকার আদায় হয় না। আমরা তিস্তার পানি আদায় করবই।’ তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘১৫ বছরে আওয়ামী লীগ তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি। ভারত বাংলাদেশের ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখেছে।’
তিস্তাপাড়ের মানুষের মতামত:
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা আজিবর রহমান বলেন, ‘তিস্তা ১০ বার আমার বাড়ি কেড়ে নিয়েছে। সরকার শুধু নদী বাঁধ দিন, আর কিছু চাই না।’
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে আন্দোলন:
বিএনপি এ আন্দোলনকে ‘জনগণের আন্দোলন’ বলে দাবি করলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি নির্বাচনের আগে দলীয় শক্তি প্রদর্শন ও জনসমর্থন বৃদ্ধির কৌশল। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণও একটি উদ্দেশ্য হতে পারে। ৪৮ ঘণ্টার এ আন্দোলন তিস্তা সংকট সমাধানে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার একটি বড় প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
–সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট
–ON/SMA