দরিদ্রতার বাধা জয় করে মেডিকেলে ভর্তি সুযোগ, অনিশ্চিত শিমার ভবিষ্যৎ

নরসিংদীর রায়পুরার মেধাবী শিক্ষার্থী শিমা আক্তার কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিকূলতাকে জয় করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৭৬.২৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে তার স্বপ্ন পূরণে এখন প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা। মেয়ের ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের ভ্যানচালক মো. বাদশা মিয়া ও গৃহকর্মী লায়লা বেগমের বড় মেয়ে শিমা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শিমা সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। দারিদ্র্যের মাঝেও পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। কিন্তু এখন অর্থ সংকটের কারণে তার মেডিকেল ভর্তির স্বপ্ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শিমা বলেন, ‘আগে থেকেই আমার স্বপ্ন একজন ভালো ডাক্তার হওয়া। কিন্তু আমাদের পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে জানি না আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। কলেজে পড়ার সময় টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারতাম না, বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ হেঁটে আসা-যাওয়া করতে হতো। স্ট্রাগল আমার জীবনের একটা অংশ। বাবা-মা ও আমি নিজেও অসুস্থ হলে ভালো চিকিৎসা নিতে পারিনি। ডাক্তার হয়ে তাদের জন্য কিছু করতে চাই, পাশাপাশি আমার মতো গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সেবা করতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’
তার বাবা মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার খবরে এলাকাবাসী খুশি, কিন্তু আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। মেয়ের ভর্তির খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক সময় নিজে না খেয়ে মেয়েকে সামর্থ্য অনুযায়ী খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। মেয়েটা অনেক কষ্ট করে এখানে পৌঁছেছে। আমি সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই, যাতে আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়।’
তার মা লায়লা বেগম বলেন, ‘মেয়ের পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। তার বাবা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালান। আমি সামান্য আয় করে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। আজ সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু অর্থের অভাবে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কেউ যদি মেয়ের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে তার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী মেয়েটির ভর্তি নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত, যাতে শিমার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশ ও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারে।
শিমার শিক্ষক মাহমুদাবাদ রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘দারিদ্র্যের মাঝেও শিমা অত্যন্ত মেধাবী। এই অবস্থায় তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’
-হারুনূর রশিদ, রায়পুরা,নরসিংদী
ON/RMN