কাঁঠালিয়ায় বধ্যভূমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া তালতলা বাজার সংলগ্ন অরক্ষিত বধ্যভূমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিনব্যাপী কাজ করে বাঁশ, কাঠ ও নেট দিয়ে বধ্যভূমিটির সীমানা প্রাচীর তৈরি করেন সংগঠনের সদস্যরা। এ কাজে সহায়তা করেন গণহত্যায় নিহতদের স্বজনরাও।
বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম ও সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক হোসেন খানের উপস্থিতিতে কাজটি সম্পন্ন হয়। নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মো. সাকিবুজ্জামান সবুর। কাজের সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মো. সিয়াম হোসাইন, সহসভাপতি মো. সোহাগ মুন্সী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানসহ অন্যান্য সদস্যরা।
১৯৭১ সালের ২৫ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা আমুয়া, বাঁশবুনিয়া ও ছোনাউটা গ্রামে নৃশংস গণহত্যা চালায়। তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ৩৯ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে তালতলা বাজারের পূর্ব পাশে বাঁশবুনিয়া হাই স্কুল সংলগ্ন ভাড়ানি খালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে বাঁশবুনিয়ার ৩০ জন, আমুয়ার ৮ জন এবং ছোনাউটার ১ জন ছিলেন।
স্বাধীনতার পর জঙ্গলে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া মনোরঞ্জন হালদারসহ কয়েকজন মিলে নিহতদের মধ্যে ১৫-২০ জনকে গণকবরে মাটি চাপা দেন।
স্বাধীনতার পর শহীদ পরিবারগুলো তৎকালীন সরকার থেকে মাত্র একটি ঢেউটিন ও ৬০০ টাকা অনুদান পায়। বীরমুক্তিযোদ্ধা নারায়ণ কাঞ্জিলাল জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়ে এসেছি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গণহত্যার ইতিহাস জানতে পারে।’
২০১৫ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়, যা তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শাখাওয়াত হোসেন উদ্বোধন করেন। তবে প্রাচীর না থাকায় এটি গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন নিহতদের স্বজনরা।
এ প্রেক্ষাপটে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে বধ্যভূমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষীকান্ত মিস্ত্রী, অভিনাস সন্নমত এবং নিহতের স্বজন সমীর মণ্ডল, তাপস দে ও কমল কান্তি দে বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘের এ মহৎ উদ্যোগ আমাদের প্রাণ ছুঁয়েছে। শহীদদের স্মৃতিরক্ষার জন্য তারা যে কাজ করেছেন, তার জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।’
- মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি
ON/MDK