ভয়াবহ দূষণের কবলে শীতলক্ষ্যা, বিলীনের পথে মাছ

নারায়ণগঞ্জে ডাইং কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত কেমিকেলের কারণে ভয়াবহভাবে দূষণের কবলে পড়েছে শীতলক্ষ্যা নদী। বিলীন হয়ে যাচ্ছে সব ধরনের মাছ। দূষণ থেকে নদী রক্ষায় ডাইং কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দারাসহ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের।
নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান পরিবেশ অধিদফতরের জেলা উপ-পরিচালক। পাশাপাশি নদী রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও।
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ডাইং কারখানার বিষাক্ত কেমিকেলের এমন বর্জ্য খাল ও ডোবা-নালা দিয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। নদীর পানির সঙ্গে দূষিত হচ্ছে খালগুলোর আশপাশের পরিবেশও। নদী দূষণকারী এমন অসংখ্য ডাইং কারখানা গড়ে উঠেছে শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলায় ছোট-বড় সাড়ে চার শতাধিক ডাইং, ওয়াশিং ও ফিনিশিং কারখানাসহ নদীকেন্দ্রীক আরও দুই শতাধিক শিল্প কারখানা রয়েছে। অধিকাংশ কারখানাতেই ব্যবহার হচ্ছে না বর্জ্য পরিশোধনকারী ইটিপি প্লান্ট। ফলে এসব কারখানার বিষাক্ত রঙ ও কেমিকেলের রাসায়নিক বর্জ্য নদী ভয়াবহভাবে দূষণ করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীর সব ধরনের মাছ। এক সময়ের খরস্রোতা শীতলক্ষ্যা নদী এখন মৃত প্রায়। নদীতে গোসল করলে নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জেলার পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন,
নদীকে দূষণ থেকে রক্ষার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে আমরা আবেদন জানিয়েছি। ডাইংসহ নদীকেন্দ্রীক সব শিল্প কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা নদী রক্ষা কমিশন ও পরিবেশ অধিদফতরের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
তবে শীতলক্ষ্যাসহ অন্যান্য নদী দূষণ রোধে নানা কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদফতরের জেলা উপ পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ।
তিনি বলেন, ‘নদী দূষণের কারণে এর আগে আমরা বিভিন্ন ডাইং কারখানাসহ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করেছি। ওইসব প্রতিষ্ঠানের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ আমরা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। ডাইং কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করছি। এরপরেও যদি আমরা দেখি কোন প্রতিষ্ঠান ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার করছে না বা বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করছে, তাহলে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো’।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্মাণাধীন একটি প্রকল্প পরিদর্শনে এসে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা সম্মিলিত কাজ। কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ অধিদফতর ও নদী রক্ষা কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে যতো ধরনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব’।
জেলা পরিবেশ অধিদফতর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে নদী ও খাল দূষণকারী ১৩০টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে আর্থিক জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সূত্র: সময় টিভি
ON/MRF