সপ্তাহে তিন দিন ছুটি যে কারণে দিচ্ছে জাপান

জাপানের সরকারি অফিসগুলোয় কর্মীদের তিন দিন ছুটি দিয়ে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আগামী এপ্রিল মাস থেকেই এই নীতি কার্যকর হবে।
কর্মজীবী মায়েদের সাহায্য করা এবং দেশটিতে রেকর্ড পরিমাণ নিম্ন প্রজনন হার বাড়ানোর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দেশটির সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার বলেছে, নতুন নিয়ম আগামী এপ্রিলে শুরু হবে। ফলে কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ছুটি পাবেন। এ ছাড়া একই সঙ্গে আরেকটি নতুন নীতি চালু হচ্ছে। এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মা–বাবারা বেতন কিছুটা কাটছাঁট করে সময়ের আগেই অফিস থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে গত বুধবার নতুন এই নীতি ঘোষণার সময় বলেছেন, ‘আমরা নমনীয়তার সঙ্গে কাজের ধরন পর্যালোচনা করব…সন্তান জন্মদান ও শিশুর যত্ন নেওয়ার কারণে কাউকে যেন চাকরি ছেড়ে দিতে না হয়, বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব।’
নীতিনির্ধারণী বক্তব্যে ইউরিকো কোইকে আরও বলেন, ‘এখন টোকিওর পুরো জাতির এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে জনগণের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতি রক্ষা এবং উন্নত করতে উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।’
জাপানে উর্বরতা শক্তির হার, যা বহু বছর ধরে দ্রুত পতন দেখেছে, জুন মাসে আরেকটি রেকর্ডের নিম্নস্তরে পৌঁছেছে, এমনকি সরকার যুবকদের বিয়ে করতে এবং পরিবার শুরু করতে উত্সাহিত করার প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে।
কয়েক বছর ধরে জাপানে জন্মহার আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গত জুনে জন্মহার রেকর্ড পরিমাণ নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। দেশটির সরকার তরুণদের বিয়ে ও পরিবার শুরু করতে উত্সাহিত করার প্রচেষ্টা বাড়ানোর পরও জন্মহার রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছর দেশটিতে মাত্র ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়েছে। এতে প্রজননের হার ১ দশমিক ২–এ নেমে এসেছে। অথচ জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন ২ দশমিক ১ শতাংশ জন্মহার।
জাপান সরকার জনসংখ্যা–সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ‘এখন না হলে কখনোই নয়’ নীতির জন্য চাপ দিচ্ছে। পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার মতো উদ্যোগ চালু করছে।
অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, কঠোর কর্মসংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জন্মহারের এই নিম্নগতির জন্য দায়ী। জাপানে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির করপোরেট সংস্কৃতির একটি বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে কর্মীরা প্রায়ই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগেন এবং চরম ক্ষেত্রে মৃত্যুপর্যন্ত হয়। জাপানে অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু হওয়াকে স্থানীয় ভাষায় ‘কারোশি’ বলা হয়।
অন্যান্য দেশের মতো জাপানেও নারীরা প্রায়ই কর্মজীবন বা সংসার, যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার চাপে থাকেন। তবে জাপানের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা নারীর গর্ভাবস্থা এবং সন্তান লালন-পালনকে কঠিন করে তুলেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, জাপানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য প্রকট। গত বছর দেশটিতে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ছিল ৫৫ আর পুরুষদের জন্য ছিল ৭২ শতাংশ। এই বৈষম্যের হার অন্যান্য উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
পশ্চিমা দেশগুলোয় চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর বিষয়ে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু হলে কর্মীদের মধ্যে সুস্থতা ও উত্পাদনশীলতা বেড়ে যায়।
তবে জাপানে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর ধারণাটি এখনো মৌলিক পর্যায়ে আছে। দেশটিতে কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করাকে অনেকেই কোম্পানির প্রতি আনুগত্য হিসেবে বিবেচনা করে।
সুত্র: প্রথম আলো