আহবায়কের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে যুগ্ম আহবায়কের প্রশ্ন

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ঈশা আসলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি কিনা এবং তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই কমিটিরই এক যুগ্ম আহবায়ক।
ওই যুগ্ম আহবায়ক নাকি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, এরশাদ আলী মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখাতে পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এরপর বুধবার এরশাদ আলী ঈশা কিছু ডকুমেন্টের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বলেছেন, তিনি আশা করছেন ওই নেতা এবার পদত্যাগ করবেন। তিনি অবশ্য পোস্টে কারও নাম লেখেননি।
যোগাযোগ করা হলে এরশাদ আলী ঈশা বলেন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ওয়ালিউল হক রানা সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা নন। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখাতে পারলে ওয়ালিউল হক রানা পদত্যাগ করবেন। রানার এমন কথা আমলে নিয়ে তিনি ফেসবুকে ওই পোস্ট করেছেন বলে জানান এই বিএনপি নেতা।
এরশাদ আলী ঈশা তার ফেসবুকে ২০০৫ সালে প্রকাশিত গেজেটের একটি অংশ, ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সাময়িক সনদপত্র, ২০০৬ সালে তৎকালীন মেয়র ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর সই করা সিটি করপোরেশনের পৌরকর ও পানিচার্জ মওকুফের চিঠি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া একটি পরিচয়পত্রের ছবি পোস্ট করেছেন।
তিনি লেখেন- আমার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট, গেজেট, এমএসআই। যিনি বলেছেন আমার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দেখাতে পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন, আশা করি তিনি পদত্যাগ করবেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ও যুগ্ম আহবায়ক ওয়ালিউল হক রানার ভেতর দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। রানাসহ কয়েকজন নেতা তাদের অনুসারীদের নিয়ে মহানগর বিএনপির ব্যানারেই ৭ নভেম্বরের পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন।
আহবায়ক এরশাদ আলী ঈশার এমন ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে রানা বলেন, উনি পদত্যাগ করতে বললেন না কি বললেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না। তিনি তো দলের মালিক নন।
এরশাদ আলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো এটাও বলেছি যে, বিগত ৩৪ বছরে তার নামে কোনো মামলা তো দূরের কথা, একটা জিডিও হয়নি। এই কথাটা তিনি বলছেন না কেন?
রানা বলেন, উনার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে প্রশ্ন আছে, এটা সবাই জানে। এ শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধারাই বলবেন কে কে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।
এরশাদ আলী ঈশা ফেসবুকে যেসব ডকুমেন্ট দিয়েছেন, সেগুলো আসল নাকি নকল তা যাচাই করার পরামর্শ দিয়ে ওয়ালিউল হক রানা বলেন, বিগত সরকারের আমলে রাজশাহী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং এরশাদ আলী ঈশাসহ বেশ কয়েকজনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের তদন্ত কমিটি এরশাদ আলী ঈশার সনদ বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণকের প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রয়োজন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশও; কিন্তু বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত হওয়া রাজশাহী মহানগরের ৫৫২ জনের মধ্যে ১৬০ জনের বিষয়ে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সে কারণে জামুকা ২০২১ সালে তাদের নতুন করে যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয়।
জামুকার নির্দেশনায় জেলা প্রশাসন একটি কমিটি করে এই ১৬০ জনকে নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে। এরপর ওই কমিটি ১৬০ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করে। আর গেজেট নিয়মিতকরণের সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ঈশাসহ ১২৬ জন। এই ১২৬ জনেরই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে বুধবার এরশাদ আলী ঈশা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং তার স্বপক্ষে আদেশ পান। এর ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার গেজেট নিয়মিতকরণ হয়েছে। তিনি এখন আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন।
সুত্র: যুগান্তর
ON/RMN