তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত

Wednesday, June 7, 2023

তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধিত

spot_img
Homeধর্মনামাজি ব্যক্তিও কি দুর্ভোগ পোহাবে?

নামাজি ব্যক্তিও কি দুর্ভোগ পোহাবে?

- Advertisement -
Google search engine

ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ নামাজ। দিনে পাঁচ সময় নামাজ পড়া ফরজ। কিন্তু এ নামাজ মনগড়াভাবে পড়লে আদায় হবে না। কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজ পড়তে হবে। এর ব্যতিক্রম ঘটলেই হিতে বিপরীত হতে পারে। ব্যতিক্রমী এ নামাজ তার নামাজিকে জাহান্নামেও নিয়ে যেতে পারে। কোরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় তিন শ্রেণির নামাজির কথা ওঠে এসেছে; যারা দুনিয়া ও পরকালে দুর্ভোগে পড়বে। তারা কারা?

১. নামাজে অলসতাকারী

যারা নামাজ পড়তে অলসতা করে। এ অলসতার কারণে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না। তাদের নামাজ কবুল হয় না। বরং তাদের জন্য রয়েছে পরকালের শাস্তি। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ

‘এরপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন/অলস।’ (সুরা মাউন: আয়াত ৪-৫)

কোরআনুল কারিমের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, এরা হলো সেইসব লোক, যারা নামাজ থেকে উদাসীন হয়ে খেল-তামাশায় ব্যস্ত থাকে। উদাসীন লোকদের মধ্যে একদল এমন আছে, যারা রুকু-সিজদা, ওঠা-বসা যথাযথভাবে করে না। কেরাত, দোয়া ও তাসবিহ যথাযথভাবে পাঠ করে না। কোনো কিছুর অর্থ বোঝে না বা বুঝবার চেষ্টাও করে না। আজান শোনার পরেও যারা অলসতা করে দেরি করে এবং নামাজে দাঁড়িয়ে অমনোযোগী থাকে।

২. যথাযথভাবে নামাজ না পড়া

যারা নামাজে মনোযোগী হয় না। দায়সারাভাবে নামাজ পড়ে। নামাজের বিধি-বিধানগুলোও যথাযথভাবে মেনে নামাজ পড়ে না। এরূপ নামাজ আদায়কারীর সম্পর্কে হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করেন। তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করে। নামাজের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন, তুমি যাও, পুনরায় নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি নামাজ আদায় করোনি। (অর্থাৎ তোমারনামাজ আদায় হয়নি) এভাবে লোকটি তিনবার নামাজ আদায় করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তিনবারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি নামাজ আদায় করতে জানি না। অতএব আমাকে নামাজ শিখিয়ে দিন!

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন তাকবির দেবে। তারপর কোরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হয়, তা পাঠ করবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে। এরপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। আর প্রত্যক নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি ৭৫৭)

হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজ চুরি করে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কীভাবে নামাজ চুরি করে? তিনি বলেন, সে নামাজে রুকু ও সেজদা পূর্ণ করে না।’ (মুসনাদে আহামাদ ২২৬৯৫)

এ হাদিসের আলোকে বুঝা গেলো, বড় চোর হচ্ছে যারা নামাজের মধ্যে চুরি করে। দুনিয়ার জীবনে মানুষ মানুষের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা চুরি করে, এটাকে সামান্য চুরি বলা যেতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের মহামূল্যবান সম্পদ, জান্নাতে যাওয়ার পুঁজি, শ্রেষ্ঠতম ইবাদত চুরি করে সে-ই প্রকৃতপক্ষে বড় চোর।

৩. লোক দেখানো নামাজ

লোক দেখানো নামাজ আদায় করার পরিণতিও দুর্ভোগ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ الَّذِیۡنَ هُمۡ یُرَآءُوۡنَ

‘এরপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন/অলস। যারা লোক দেখানোর জন্য তা (নামাজ) করে।’ (সুরা মাউন: আয়াত ৪-৬)

এটি মুনাফিকির আচরণ। কারণ মুনাফিকরা মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেছেন-

اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰهَ وَ هُوَ خَادِعُهُمۡ ۚ وَ اِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَ لَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیۡلًا

‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন। যখন ওরা নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়—লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা: আয়াত ১৪২)

হাদিসে পাকে এসেছে, মহান আল্লাহ তাআলা লোক দেখানো ইবাদতকারীকে তার আমলসহ প্রত্যাখ্যান করেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন-

মহান আল্লাহ লোক-দেখানো ইবাদতকারীকে তার আমলসহ প্রত্যাখ্যান করেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন-

أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) থেকে সব অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সঙ্গে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমলকে বর্জন করি।’ (মুসলিম ২৯৮৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। লোক দেখানো ও অলসতা, অমনোযোগিতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

- Advertisement -
Google search engine
আরো খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

৬ দফা দাবি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে: রাষ্ট্রপতি

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বুধবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক...

হজ কবুল হয় যেসব আমলে

অর্থ ও শারীরিক পরিশ্রমের সমন্বয়ে একটি শ্রেষ্ঠতম ইবাদতের নাম হজ। একজন মুসলমানের সারা জীবনের চাওয়া-পাওয়া আর স্বপ্নের অন্যতম অধ্যায় এই হজ। কেননা হজ একটি...

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বুধবার (৭ জুন) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২-এ তিনি...
- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর