‘ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি’: জামায়াত আমির

‘ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি’—শনিবার (১৯ এপ্রিল) নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে বিশাল এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের আমীর মোখলেছুর রহমান মাস্টার। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও নীলফামারী জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাক্তার, এবং জেলা মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এখনও সব যায়গায় চাঁদাবাজ আর দখলবাজদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ।’ তিনি দাবি করেন, সাধারণ মানুষ এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বরাতে জানতে পেরেছি আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচন চাই, তবে তার আগে খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। বিচার ও সংস্কার ছাড়া পেশিশক্তির নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না।’
এসময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনও কারাগারে কেন? সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘মুক্তি না দিলে পুনরায় রাজপথে আন্দোলন শুরু হবে।’
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। বিচার, সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন—এই তিন শর্ত পূরণ না হলে নির্বাচন অর্থহীন।’
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘১৮ কোটি নির্যাতিত মানুষের প্রথম দাবি, গণহত্যার বিচার। শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, আহতদের চিকিৎসা ও পঙ্গুদের সহযোগিতা নিশ্চিত করে নির্বাচন করতে হবে।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিনি বলেন, ‘জাতিকে কেউ এ নিয়ে চোখ রাঙাবেন না। ভারতের সঙ্গে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক চাই।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। গুম-খুন করে কণ্ঠরোধ করেছিল। জনগণের আন্দোলনে তারা শুধু গদিই ছাড়েনি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা দেশ ছাড়ে না।’
নারীদের নিয়ে গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা চাকরি করতে পারবে না—এটা ভুল ধারণা। আমরা আগে তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করব, তারপর নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তুলব।’
শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষিতরা আত্মহত্যা করছে কর্মসংস্থানের অভাবে। আমরা চাই, সনদ নিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।’
দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৩ হাজার টাকা বেতনে কর্মচারীকে ১৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া দিতে হলে সে কী করবে? রাষ্ট্রযন্ত্রই তাদের দুর্নীতিতে বাধ্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে সবার নিরাপত্তা, সম্মান ও কর্মসংস্থান থাকবে। আমরা সৎ লোকের শাসন ও কোরআনের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই।’
সামাজিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পরে আমরা ১৫ দিন মসজিদ, মন্দির ও গির্জা পাহারা দিয়েছি। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান পাহারা দিতে না হয়।’
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা অন্যের সম্পদ বা সম্মান নষ্ট করে না।’
শেষে তিনি দেশের উন্নয়নে জামায়াতকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান।
–মাজেদুল ইসাম স্বপন, জলঢাকা
–ON/SMA