গোবিন্দগঞ্জে আলু সংরক্ষণের স্লিপ সংকট, বিপাকে কৃষক

গোবিন্দগঞ্জে কৃষকদের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণের আগেই হিমাগারের বুকিং স্লিপ শেষ হয়ে গেছে, ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকেরা হিমাগারে আলু রাখতে চাইলেও স্লিপ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে খেত থেকে তোলা আলু কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকদের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক নয়ন সাহা জানান, তিনি এবার দুই বিঘা বেশি জমিতে আলু আবাদ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে আলু তোলার উপযুক্ত হবে, কিন্তু বাজারে দাম কম থাকায় তিনি হিমাগারে সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন। তবে একাধিক হিমাগারে গিয়েও স্লিপ না পাওয়ায় তিনি হতাশ হয়েছেন। তার অভিযোগ, হিমাগার কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে মজুতদাররা আগেই সব স্লিপ নিয়ে নিয়েছেন, ফলে সাধারণ কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯ হাজার ৩১৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এ থেকে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৯৬ টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উপজেলায় মাত্র ৪টি হিমাগারে ৩৬ হাজার ৫০০ টন আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ কৃষক আলু সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না, যার ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে দাম আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে।
বকচর, মদনপুর ও সূর্যগাড়ি এলাকার বিভিন্ন হিমাগারে কৃষকেরা স্লিপের জন্য ভিড় করলেও স্লিপ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, প্রকৃত চাষিরা স্লিপ পাচ্ছেন না, বরং মজুতদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে স্লিপ বিক্রি করা হয়েছে।
শাখাহার ইউনিয়নের বাল্ল্যা গ্রামের কৃষক হেলাল সরকার জানান, তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। স্লিপ সংকটের খবর পেয়ে কয়েকটি হিমাগারে যোগাযোগ করলেও কোনো স্লিপ পাননি। তার অভিযোগ, ‘হিমাগার কর্তৃপক্ষ প্রকৃত কৃষকদের বদলে মজুতদারদের স্লিপ দিয়েছে। ফলে আমরা আলু সংরক্ষণ করতে পারছি না এবং বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বো।’
এ বিষয়ে হিমাদ্রী লিমিটেডের ম্যানেজার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বুকিং স্লিপ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের হিমাগারে আগের বছর যারা আলু রেখেছিলেন, তাদেরই এবারও স্লিপ দেওয়া হয়েছে। তবে কালো বাজারে স্লিপ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।’
গোবিন্দগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার সজিব বলেন, ‘এবার আমরা স্থানীয় কৃষকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি এবং মজুতদারদের কোনো স্লিপ দেওয়া হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু বুকিং হয়েছে, আমাদের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৩ লাখ বস্তা।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেন, সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের হিমাগারগুলোতে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা রয়েছে। কালো বাজারে বুকিং স্লিপ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই এবং কেউ অতিরিক্ত আলু মজুত করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
–মো. জোবাইদুর রহমান (সাগর), গোবিন্দগঞ্জ
–ON/SMA