তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি: কৃষকদের দুশ্চিন্তা

খরা মৌসুমে তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে ৫০ সেন্টিমিটার হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে নদীর চরাঞ্চলে রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল ও বাদামের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ভারতের দিক থেকে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। ব্যারাজের অপারেটর নুরুল ইসলাম জানান, ‘ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে পানি ছাড়ার কোনো পূর্বাভাস না পাওয়ায় আমরা অতিরিক্ত জলকপাট খুলে দিয়েছি।’
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পানি চুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির আগে ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ছেড়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। তিস্তার চরে ফসল রক্ষায় ব্যর্থ কৃষক কদম আলী বলেন, ‘আন্দোলনের ঠিক আগে পানি ছেড়ে আমাদের ঘরছাড়া করা হচ্ছে। এটা ভারতের রাজনৈতিক চাল।’
আকবর আলী নামে এক কৃষক জানান, ‘বিকেল নাগাদ চরের ফসল পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিপূরণ ছাড়া বাঁচার উপায় নেই।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘পানির ষড়যন্ত্রমূলক প্রবাহে আন্দোলন পিছু হটবে না।’
নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদের মতে, ‘বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।’
১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তির মতো তিস্তার ন্যায্য বণ্টন চুক্তি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রাখার ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরও একই সময়ে পানি ছেড়ে ফসল নষ্ট করেছিল ভারত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পানি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত জলকপাট খোলা হবে। তবে স্থানীয়রা ক্ষতিপূরণ ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম থামবে না।’
তিস্তার পানি সংকট বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অন্যতম অমীমাংসিত ইস্যু। কৌশলগত পানি প্রবাহ কূটনীতির চেয়ে কৃষকের জীবনযুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা বা আইনি লড়াই ছাড়া এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান অনিশ্চিত।
–সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট
–ON/SMA