আন্তর্জাতিক জলাভূমি দিবসে সুনামগঞ্জে দিনব্যাপী উৎসব

বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় দিনব্যাপী হাওর উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলার কালনী নদীর তীরে উজানধলের মাঠে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
হাওর উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান। এছাড়াও দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব সরকার, দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
হাওর উৎসবে সকাল ১০টায় আলোচনা সভা, অডিও-ভিডিও প্রদর্শনী, দুপুর ১২টায় গম্ভীরা পরিবেশনা, দুপুর ১টায় মধ্যাহ্নভোজ, বিকাল ২টায় প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট, বিকাল ৪টায় গাছের চারা বিতরণ, সন্ধ্যা ৫টায় ভাটি গানের আসর এবং রাত ৮টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আলোচনা সভায় হাওরকেন্দ্রিক সাতটি জেলার পক্ষ থেকে সাতজন প্রতিনিধি হাওরের সমস্যা ও সমাধান বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করেন প্রধান অতিথি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আজকের সমাবেশ থেকে যে দাবিগুলো এসেছে, আমরা ইতোমধ্যেই সে বিষয়ে অবগত আছি। হাওরের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা আপডেট করার কাজ চলছে। পরিকল্পনামাফিক প্রকল্প গ্রহণ করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে হাওরের জন্য ডজনখানেক প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে সিলেট বিভাগের জন্য সাতটি প্রকল্প রয়েছে। হাওরের উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, যা সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘একসময় হাওর অঞ্চল অনেকটাই অবহেলিত ছিল, তবে এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। হাওরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য পর্যটন, মৎস্যচাষ এবং সবুজায়নের সুযোগ রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব খাতের উন্নয়ন করা গেলে হাওর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে। সেডিমেন্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাওরের মাটিকে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব, এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বে এমন উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমাদেরও পরিকল্পিত উপায়ে অগ্রসর হতে হবে।’
দিনব্যাপী এ উৎসবে আলোচনার পাশাপাশি আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বৃক্ষরোপণ, গাছের চারা বিতরণ, গম্ভীরা পরিবেশনা, হাওরাঞ্চলের মরমি সাধক ও বাউলদের জনপ্রিয় গানের পরিবেশনা এবং প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
জাকারিয়া আহমদ, সুনামগঞ্জ
ON/SMA