কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও সূর্যের দেখা মিলছে না বলে স্থানীয়রা জানান। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে সকাল ৯টায়ও রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে, ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। চালকদের ভাষ্য, কুয়াশার ঘনত্ব এত বেশি যে এক হাত দূরত্বেও কিছু দেখা যায় না। অনেকেই অতি জরুরি কাজ ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন না।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ‘তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন এমন থাকতে পারে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘন কুয়াশা সারা দিন কাটছে না।’
শীতের তীব্রতায় দরিদ্র ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। কাজের অভাবে অনেকেরই দিন কাটছে মানবেতরভাবে। বয়স্ক ও শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বাদল মিয়া বলেন, ‘রাস্তায় চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন কুয়াশা আগে কখনো দেখিনি। হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তা পরিষ্কার দেখা যায় না।’
শীতার্তদের জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ রয়েছে। শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কুয়াশা ও শীত কৃষিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমন ধানের বীজতলা, আলু, সরিষা ও শীতকালীন সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিবিদ আবু জাফর নেয়ামতুল্যাহ জানান, ‘কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো সঠিকভাবে ফসলে পৌঁছায় না, যা ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে ফসলের বৃদ্ধি কমে যায়। কুয়াশা বাতাসে আর্দ্রতা বাড়িয়ে দেয়, যা ছত্রাকজনিত রোগ যেমন ব্লাইট, পাউডারি মিলডিউ এবং ডাউনি মিলডিউ-এর প্রকোপ বাড়ায়। ফলে ফলের গুণমান ও উৎপাদন কমে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষত শীতকালীন সবজি এবং ফল যেমন টমেটো, আলু, সরিষা, এবং ধান কুয়াশার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুল ও ফলের ঝরে পড়ার হার বাড়ে। কুয়াশা মাটির উপরিভাগের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়, যা ফসলের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এতে কচি গাছ বা চারাগাছ সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।’
এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে তিনি জানান, ‘পলিথিন বা কভার ব্যবহার করে ফসল কুয়াশার সরাসরি প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায়। ছত্রাকনাশক স্প্রে ব্যবহার করে রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করা উচিত।’
শীত মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্থানীয়রা জোর দাবি জানিয়েছেন। এদিকে ট্রাফিক বিভাগ পরিবহন চালকদের সতর্কভাবে চালানোর নির্দেশ দিয়েছে, যাতে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
-জাহিদ খান,কুড়িগ্রাম
ON/RMN