মা-ইলিশ রক্ষায় দিন-রাত অভিযান চললেও থামানো যাচ্ছে না জেলেদের। অভিযানে জেলেদের জাল-নৌকা আটক এবং জেল-জরিমানার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও থামছে না জেলেদের ইলিশ শিকার। উলটো প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর জেলেদের পক্ষ থেকে হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেপরোয়া জেলেরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের লোকজন ছিনিয়ে পর্যন্ত নিচ্ছে। জেলেরা একজোট হয়ে ইতিমধ্যে মেঘনার কয়েকটি স্পটে অভিযানকারীদের ওপর হামলা চলিয়েছে। ফলে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই মা-ইলিশ শিকার রোধে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা জানিয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ ফোর্স এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবার মধ্যরাতে হিজলা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে কোস্ট গার্ড এক জেলেকে দুইটি রামদাসহ আটক করেছে। এতে মা-ইলিশ রক্ষায় দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালী দাদনদাররা জেলেদের নামিয়ে দিয়ে মা-ইলিশ নিধনে বাধ্য করছে। হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর হরিণাথপুর, শাওরা সৈয়দখালী, চরকিল্লা, অন্তর্বাম, দেবুয়া, কাইতমা, ধুলখোলা, আবুপুর, গঙ্গাপুর, নাছোকাঠীতে মা-ইলিশ নিধনকালে জেলেরা অভিযানকারী দলের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালাচ্ছে।
এর আগে মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনায় নৌপুলিশের দুটি টিমের ওপর হামলা ও হিজলায় পুলিশের ওপর হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন সাংবাদিকদের জানান, রবিবার মেহেন্দীগঞ্জ সদর এবং জাঙ্গালিয়ার রুকুন্দিতে দুটি টিমের ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি নিজেও ধাওয়ার শিকার হয়েছেন। অপর টিমে থাকা পুলিশের ওপর জেলেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তিনি জানান, নদীতে পর্যাপ্ত মা-ইলিশ রয়েছে। মেঘনায় শিশুদের নামিয়ে মা-ইলিশ শিকার করানো হচ্ছে। শিশুদের দণ্ড দিতে না পারায় তারা বিপাকে পড়ছেন।
এদিকে সরেজমিনে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের দিয়ে জাল ফেলে বসে আছে। নিষেধাজ্ঞায় জাল ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকায় থাকা শিশুরা জানায়, বাড়িতে খাবার নেই, তাই মাছ শিকারে নেমেছে। অপর নৌকাতে চার জন প্রাপ্তবয়স্ক জাল ফেলে বসে আছে। হঠাত্ নদীতে অভিযানকারী দল আসছে এমন সংবাদে তড়িঘড়ি করে জাল টানতে শুরু করলে দেখা যায়, বেশ কিছু মা-ইলিশ ধরা পড়েছে জালে।
গত সাত দিন এখানকার বিভিন্ন নদীতে টানা অভিযান পরিচালনাকারী দলের নেতৃত্বদানকারী মত্স্য অধিদপ্তরের মত্স্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস জানান, অমাবস্যায় সামান্য ডিম ছাড়লেও আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবর পূর্ণিমাতে মা-ইলিশ পূর্ণ ডিম ছাড়বে। এ সময় ভাসানচর, বাগরজা, লেঙ্গুটিয়া পয়েন্ট, দড়ির চর, খাজুরিয়া, মাসকাটা নদী, তেঁতুলিয়া, মেঘনা, কীর্তনখোলার বেলতলা, চরবাড়িয়া, চরমোনাই পয়েন্ট, দপদপিয়া কালিজিরা পয়েন্টে জাল ফেললেই প্রচুর মা-ইলিশ ধরা পড়ে।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর মা-ইলিশ রক্ষায় বেশি অভিযান পরিচালিত হলেও জেলেদের হাত থেকে মা-ইলিশ রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে সকলেই।
বরিশাল বিভাগীয় মত্স্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনিচুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, এবার মা-ইলিশ রক্ষায় সবাই তত্পর। গত সাত দিনে বিভাগে অভিযান করা হয়েছে ৬৪৭টি। এর মধ্যে মা-ইলিশ উদ্ধার হয়েছে ৩ মেট্রিক টন, কারেন্ট জাল উদ্ধার ২৩ দশমিক ৫৯ লাখ মিটার, মামলা হয়েছে ২৭০টি, জরিমানা করা হয়েছে ৬ লাখ ১৮০ টাকা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ২২৬ জন জেলেকে।